হাওর ডেস্ক ::
দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন (২০১৮-২০১৯ অর্থবছর) ১ হাজার ৯০৯ ডলার। গত বছর এ অংক ছিল ১ হাজার ৭৫১ ডলার। এর মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৩ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৭.৮৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধিসহ সব খাতেই এগিয়েছে দেশ। সারা দেশের মানুষের হাতে হাতে দেশের সার্বিক এ উন্নয়নের চিত্র বই আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বইয়ের নাম ঠিক করা হয়েছে ‘মধ্যম আয়ের পথে বাংলাদেশ’। এতে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক উন্নয়নের চিত্র ঠাঁই পাবে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সব তথ্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব তথ্য ঢাকার তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেসে পাঠানো হবে। ১৬ই ডিসেম্বরের আগেই ‘মধ্যম আয়ের পথে বাংলাদেশ’ বইটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেবে সরকার।
বইটি বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে সবার দফতরে পৌঁছে দেয়া হবে এটি। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও ইউএনওসহ বিভিন্ন নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে এ বই।
বই প্রকাশ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমানে সারাদেশে উন্নয়নের ঢেউ লেগেছে। আমরা মাঠে-ঘাটে এসব উন্নয়নচিত্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে, সবার তা জানার অধিকার আছে। এই জন্য আমরা বই আকারে সব কিছু প্রকাশ করতে যাচ্ছি।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নুরুল আমিন বলেন, বর্তমান সরকার বই আকারে দেশব্যাপী উন্নয়নের চিত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে। বই প্রকাশের আগের ধাপের সব কাজ সমাপ্ত। চলতি মাসেই এটি ছাপাতে তথ্য প্রেসে পাঠানো হবে।
বইয়ে যে সব তথ্য থাকবে তার একটা তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়: দেশের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। শিল্প, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স- সব দিকেই ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কমে আসছে মাতৃমৃত্যুর হার: গত পাঁচ বছরে সারাদেশে কমেছে মাতৃমৃত্যুর হার। ২০১৪ সালে এ হার ছিল ১.৯৩ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে ১.৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে গড় মরণশীলতা প্রতি হাজারে ৫ জন। পল্লী এলাকায় এটি ৫.৪ জন ও শহরে ৪.৪ জন। শহরের তুলনায় গ্রামে এ হার বেশি।
কমেছে শিশু মৃত্যুর হার: বর্তমানে দেশে শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৮ জন। এর আগের জরিপে এ সংখ্যা ছিল ৪৩ জন। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে প্রথম জরিপে শিশুমৃত্যুর হার ছিল হাজারে ৯৮ জন। বর্তমানে প্রতি বছরই এ সংখ্যা কমছে।
বেড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবহার, কমেছে হারিকেন: বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেশব্যাপী বর্তমানে বিদ্যুতের আলো ব্যবহার করে ৯৬.১ শতাংশ পরিবার। অন্যদিকে হারিকেন ব্যবহার করছে মাত্র ৫ শতাংশ পরিবার। ২০১৪ সালে ৩১.৪ শতাংশ পরিবার হারিকেন ও ৬৭.৮ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করত। অন্যদিকে ২০১৪ সালে কোনো পরিবার সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও বর্তমানে ৪.৮ শতাংশ পরিবার তা ব্যবহার করছে।
গত ১১ বছরে বিদ্যুৎসংযোগ পেয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ নতুন গ্রাহক। এছাড়া বেড়েছে বিদ্যুতের মাথাপিছু ব্যবহার। এটি এখন প্রায় ১৩১ শতাংশ। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ হার ছিল ৪৭ শতাংশ।
টয়লেট সুবিধা বেড়েছে: মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হওয়ায় পাকা টয়লেট ব্যবহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮.১ শতাংশ। ২০১৪ সালে এ হার ছিল মাত্র ৬৩. ৫ শতাংশ। এর বাইরেও বর্তমানে ২ শতাংশ মানুষ উন্মুক্ত জায়গা ব্যবহার করে।
বেড়েছে সাক্ষরতার হার: সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার শতকরা ৭৩.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়। সাক্ষরতা বিস্তারে বিশাল এ অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কোর ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার’ লাভ করে।
কমেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুদের বিদ্যালয়ে নীট ভর্তির হার বর্তমানে ৯৭.৯৪ শতাংশ। প্রাথমিম বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার গত দশ বছরে কমেছে অর্ধেক। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা শূন্যের কোটায় আসবে বলে সরকারের প্রত্যাশা।
মেগা প্রকল্প: পদ্মাসেতুসহ সারাদেশে দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বর্তমান সরকার। প্রকল্পগুলো হলো- পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মান প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প। বইয়ে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হবে।
একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান: সরকারের পরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ সারা দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান হবে ১ কোটি মানুষের। এরই মাঝে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এগুলোতে ইতোমধ্যেই কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ হাজার মানুষের।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। একই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির(এডিপি) আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে বাজেট ও এডিপির সঙ্গে বর্তমান সময়ের বাজেট ও এডিপির তুলনামূলকতার চিত্রও তুলে ধরা হবে ‘মধ্যম আয়ের পথে বাংলাদেশ’ বইয়ে। এছাড়া পাকা সড়ক সুবিধাসহ সরকারের বিভিন্ন উন্ন্যন কার্যক্রমের বিস্তারিত থাকবে এ বইয়ে।