হাওর ডেস্ক:: যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে আগেও নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী এবং রূপা হক। সেই ধারাবাহিকতায় এই ৩ জন ব্রিটেনের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হলেন এবারো। তবে তাদের সাথে এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হলেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী আফসানা বেগম।
বিরোধী দল লেবার পার্টির চরম ভরাডুবির মধ্যেও দলটির প্রার্থী আফসানা ৩৮ হাজার ৬৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তিনি বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
আসনটিতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কনজারভেটিভ প্রার্থী শন ওক। তিনি পেয়েছেন ৯ হাজার ৭৫৬ ভোট। তার বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপির সংখ্যা বেড়ে হলো চারজন।
পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার আসন। এটি লেবার দলের নিরাপদ আসন হিসেবে পরিচিত। প্রায় দুই দশক ধরে এ আসনে এমপি ছিলেন লেবার দলের জিম ফিটজপেট্রিক। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তখন অনেকটা চমক দেখানোর মতো করে আসনটিতে মনোনয়ন পেলেন বাঙালি তরুণী আফসানা বেগম।
তিনি লেবার দলের লন্ডন রিজিয়ন শাখার সদস্য। জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও বাংলাদেশে তার আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে।
এদিকে হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন এলাকা থেকে জয় পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ২৮ হাজার ৮০টি ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনসারভেটিভ পার্টির জনি লাক পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৯২টি ভোট।
এর আগে ২০১৭ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন টিউলিপ। সে সময় তিনি মোট ৩৪ হাজার ৪৬৪টি ভোট পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো থেকে জয়ী হয়েছেন। তিনি ৪৪ হাজার ৫২টি ভোট পেয়েছেন। এর আগে ২০১৭ সালে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে তিনি ৪২ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অপর ব্রিটিশ এমটি রূপা হক। তিনি লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে তৃতীয়বারের মতো এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। রূপা হক নির্বাচনে ২৮ হাজার ১৩২ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ প্রার্থী জুলিয়ান গেল্যান্ট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩২ ভোট। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন রূপা।
দেশটিতে আগের যেকোনো সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী প্রার্থী জয় লাভ করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে হাউজ অব কমেন্সে রেকর্ড সংখ্যক নারীদের প্রবেশ ঘটবে। এর আগে যুক্তরাজ্যের সংসদ নির্বাচনে ৬৫০ আসনের সর্বোচ্চ ২০৮ আসনে জয় পেয়েছিলেন নারীরা।
চলতি বছরের নির্বাচনে লেবার পার্টির ভরাডুবি হলেও এই চার নারী প্রার্থী বড় জয় পেয়েছেন। ইতোমধ্যেই ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৬০০ আসনের ফলাফল হাতে এসেছে। এর মধ্যে কনজারভেটিভ দল পেয়েছে ৩৩০টি আসন এবং লেবার পার্টি পেয়েছে ১৯৬ আসন।
নির্বাচনে জয়ী হতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৬ টি আসন। ইতোমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পার করে ফেলেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি।
১৯৮৭ সালের পর এটা কনজারভেটিভ দলের জন্য সবচেয়ে বড় জয় এবং ১৯৩৫ সালের পর লেবার দলের সবচেয়ে বড় পরাজয়। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন আগামী নির্বাচনে দলের নেতৃত্বে থাকবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি এখনই পদত্যাগ করছেন না। আরো কিছু সময় দলের নেতৃত্বে থাকবেন আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য।
সৌজন্যে: সিলেট ভয়েচ।