দিরাই প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ৯০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মহিলা প্রতারনার শিকার হয়েছেন। সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের দালালচক্রের সহযোগীতায় প্রতারক লন্ডন প্রবাসী রুবেল বৃদ্ধ মহিলার পৈত্রিক ভূমির কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে তার নিজের নামে কয়েক লাখ টাকার ভুমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। প্রতারণার শিকার বৃদ্ধ মহিলা উপজেলার জগদল ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের মৃত মনফর উল্লার স্ত্রী মোছা. ছালেছা বিবি। অভিযুক্ত রুবেল বৃদ্ধ মহিলার ভাইপো একই গ্রামের মৃত মাহমদ আলীর ছেলে রুবেল মিয়া। স্থানীয়রা জানান, রুবেল বেশ কয়েক বছর ধরে লন্ডন থাকে এবং মাঝে মধ্যে দেশে আসে, রুবেলের বিরুদ্ধে গ্রামে কোন্দল সৃষ্টি ও মামলা মোকদ্দমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানিসহ একাধিক প্রতারনা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক রুবেল মিয়া ও দালাল চক্রের সদস্য উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখক আজাদ মিয়াসহ মোট ৪ জনের বিরুদ্ধে আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সুনামগঞ্জ বরাবরে মামলা দায়ের করেছেন বৃদ্ধ ছালেছা বেগম। তবে দলিল লিখক আজাদ মিয়া বলছেন, দালালির কোন বিষয় নয়, দাতা গ্রহীতার সম্মতিতে যথাযথভাবে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। মামলার সূত্রে ও ছালেছা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, পিতা আইয়ুব আলীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীসূত্রে কয়েক লাখ টাকা মুল্যের চারা, ডোবা ও বাড়ি রকম ভূমি প্রাপ্ত হন এবং ভাগ বাটোয়ারানামা সম্পাদনপূর্বক উক্ত ভূমি ভোগদখল করে আসছিলেন তিনি। বৃদ্ধ মহিলার ৫ ছেলের মধ্যে ২ ছেলে যুক্তরাজ্যে প্রবাসে ও ৩ ছেলে বাড়িতেই থাকেন। ভাইপো হিসেবে রুবেল মিয়ার নিয়মিত যাতায়ত ছিলো তাদের বাড়িতে। ভাইপো রুবেলকে অত্যান্ত বিশ^াস করতেন তিনি, রুবেলও তাকে খুবই আদরযতœ করতো। বিগত প্রায় বছরখানেক পুর্বে রুবেল মিয়া রিভিশন্যাল জরিপে মাঠপর্চা ও অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক করার কথা বললে ছালেছা বেগম সরল বিশ^াসে তাতে রাজি হন। প্রতারক রুবেল তাকে নিয়ে দিরাই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যায়, সেখানে দালাল চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় গ্রহীতা, সাক্ষী, সনাক্তকারী ও লিখক নিযুক্ত হয়ে বৃদ্ধ মহিলাকে ভুল বুঝিয়ে দলিলে স্বাক্ষর নেয় এবং রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃদ্ধ মহিলার অজান্তে ভূমি নিজের নামে করে নেয় প্রতারক রুবেল। এ ব্যাপােের অভিযুক্ত রুবেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলছেন, প্রতারনা করে নয়, উনার নিজের ইচ্ছায় দলিল সম্পাদন হয়েছে দাবী করেন তিনি। অভিযুক্ত রুবেলের ভাই আলমগীর বলছেন, ভাই দেশে আসার পর উনার সম্মতিতে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, তবে কত টাকার বিনিময়ে রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে তা আমার জানা নেই।
রাজনগর এবতেদায়ী মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও গ্রাম উন্নয়ন ফান্ডের ক্যাশিয়ার মোজামিল হোসেন বলেন, ছালেছা বেগম সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ। জায়গা বিক্রি হলেতো আমাদের জানার কথা, আমরা এবিষয়ে কিছুই জানিনা। তাছাড়া ছালেছা বেগমের দুই পুত্র লন্ডনে থাকে, উনারতো জায়গা বিক্রি করার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, ফুফুদের সাথে জায়গা নিয়ে ঝামেলা ছিলো রুবেলের। গত প্রায় ছয় মাস আগে এই জায়গা নিয়ে সালিশ হয়েছিল, আমি সেখানে ছিলাম, সেসময়ে রুবেল এই জায়গা সে কিনে নিয়েছে একথা একবারও বলেনি। গত কিছুদিন আগে ছালেছা বেগম আমাদের ডেকে জানিয়েছেন, রুবেল কাগজ ঠিক করে দেয়ার কথা বলে তাকে দিরাই সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে তার জায়গা বৈঈমানী করে নিজের নামে করে নিয়েছে।
গ্রামের মৃত সজিদ উল্লার পুৃত্র আকলুছ মিয়া বলেন, আমি মুর্খ মানুষ। সমস্যায় পড়ে রুবেলের কাছে বাড়ি বিক্রয় করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আমার বাড়ি জমি-জমা সবকিছু বিক্রি মর্মে দলিল তৈরী করে রেজিস্ট্রি করার কৌশল করে। আমার ভাই তখন ঢাকা ছিল। দলিল না পড়ে আমাকে স্বাক্ষর দিতে নিষেধ করে। এরপর আমার ভাই ঢাকা থেকে এলে রুবেলের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়। ছালেছা বেগমের ছেলে ছালিক মিয়া বলেন, বাড়িতে বসবাসরত আমরা তিন ভাই ও আমার মা কেইউ পড়ালেখা জানিনা। রুবেল আমার আপন মামাতো ভাই, ভূমির কাগজ ঠিক করার বললে, আমিও আমার মাকে বলি রুবেলের মাধ্যমে কাগজ ঠিক করে নিতে। বিশ^াসের সুযোগ নিয়ে সে এমনটা করেছে। বিক্রিই যদি করবেন তবে দলিলে সাক্ষী হিসেবে আমাদের কারো নাম নেই কেন। তিনি নিজের বাড়ি দেখিয়ে বলেন, প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে আমরা বাড়ি নির্মাণ করেছি, বর্ষা মৌসুমে আমার মায়ের যাতায়তের জন্য ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নৌকা তৈরী করেছি। আমাদের পরিবার এলাকার অনেককেই সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। তাহলে আমার মা কেন জায়গা বিক্রি করবেন। উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার আবদুল বাতেন বলেন, এখনো এ ধরনে কোন অভিযোগ বা তদন্ত আমার হাতে আসেনি, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।