শামস শামীম::
কালের গহ্বরে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া খ্রিস্টাব্দ ২০১৯ সুনামগঞ্জবাসীর জন্য ছিল মাইল ফলক উন্নয়নের বছর। ব্যক্তিগত জীবনে বছরটি মানবজীবনে সুখ দুঃখের অমোচনীয় দাগ রেখে গেছে। তবে সুনামগঞ্জবাসীর জন্য শুভাশীষ নিয়েই এসেছিল ২০১৯। জেলার পরতে পরতে ছিল মোটা দাগের উন্নয়নযজ্ঞের স্মৃতিচিহ্ন। এই উন্নয়ন চিহ্নগুলোই এই অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে স্থায়ী সফলতা বয়ে আনবে এমন আশা করেছেন রাজনৈতিক সচেতন লোকজনসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষজন। তাই মেঘা উন্নয়ন প্রকল্পের এই বছরটিকে বিদায় জানাতে হৃদয়ে যেন বাধছে হাওরবাসীর! তবে আসছে ২০২০ খ্রিস্টাব্দ উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এই প্রত্যাশা সবার।
স্বাধীনতার পর হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন, বাস্তবায়ন হয়েছে বিদায়ী বছরটিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কর্মসংস্থানসহ বৃহত্তম প্রকল্পের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় খবরটি এসছে বছর ফুরানোর একদিন আগে। ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রীসভার বৈঠকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় খসড়া আইন অনুমোদন লাভ করেছে। এর মাধ্যমে সুনামগঞ্জের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হওয়ার পাশাপাশি দেশ বিদেশের শিক্ষার্থীদের আগমণের ফলে সাংস্কৃতিক মানোন্নয়নও হবে বলে মনে করছেন অনেকে। এর আগে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও নার্সিং কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইনস্টিটিটিউট, শিল্প ও কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), বারটানসহ একাধিক বড় প্রকল্পের কোনটির অনুমোদন, কোনটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মমূখি প্রশিক্ষণ ও কৃষি উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এগুলোর পাশাপাশি গেল বছরে যোগাযোগ ক্ষেত্রে সেতু ও সড়কের বড় কয়েকটি প্রকল্প অনুমোন ও বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এর মধ্যে তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে শাহ আরেফিন অদ্বৈত সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়েছে। এই সেতুর ফলে সীমান্তের যোগাযোগ অনেকটা সহজ হবে। এছাড়া গত বছর নতুন করে শুরু হয়েছে ছাতকের সুরমা সেতুর কাজ। বিএনপি আমলে গুচ্চ প্রকল্পের মাধ্যমে খালেদা জিয়া এটি উদ্বোধন করলেও কোন বরাদ্দ না থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই সেতুটিও ছাতক- দোয়ারাবাসীর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীতে ধারারগাঁও সেতুর অনুমোদন শেষে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত বছরে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সেতুর কাজটিও জেলাবাসীর উন্নয়নে বড় ঘটনা। এদিকে ‘সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, আজিমিরিগঞ্জ মহাসড়ক বাস্তবায়নে’ একনেকে হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে সম্প্রতি। এই সড়কটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের আরেকটি বিকল্প যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া হাওরে বঙ্গবন্ধু কিল্লা নির্মাণ, বজ্রনিরোধক পোল নির্মাণ, নদী খনন ও নদী তীর সংরক্ষণেও আরো কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনেরও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বছর ব্যাপী ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণ, সুনামগঞ্জ মোহনগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণ, সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ সড়ক নির্মাণ, ধর্মপাশায় ১৮ কি. ওড়াল সেতু নির্মাণ, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প আলোচনায় ছিল। ২০২০ সনের শুরুতেই এই প্রকল্প গুলো অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে পুরোদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের চারদিকেই যোগাযোগের সম্প্রসারণ ও সহজতর হবে।
সুধীজন ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা খ্রিস্টাব্দ ২০১৯ কে উন্নয়নের বছর হিসেবে অভিহিত করে জাতীয় উন্নয়নে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ সমতায় ফেরবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।
রাজনৈতিক মহলের মতে এই বিরাট প্রকল্পগুলো যার হাত ধরে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে সেই নেপথ্য মানুষটি হচ্ছেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সজ্জন রাজনীতিবিদি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এছাড়াও জেলার অন্যান্য সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ উন্নয়নযজ্ঞকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। এই ঐক্য অটুট থাকলে আসছে বছরও উন্নয়নের বছর হতে পারে বলে মত দিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর পরিমল কান্তি দে বলেন, ২০১৯ আমাদের জন্য আনন্দের বছর। আমরা এই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল কলেজ, নার্সিং কলেজ, সেতু রাস্তাসহ বড় বড় প্রকল্প পেয়েছি। এগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠা ও হাওরবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক ভালোবাসার কারণেই এসব সম্ভব হয়েছে। আসছে বছরেও আমাদের যেসব অপূণূ দাবি ও প্রত্যাশা রয়েছে সেগুলোও অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হবে বলে বিশ্বাস করি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমি হাওরবাসীকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে বাস্তবায়ন করতে পেরে আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী হাওরের জন্য কোন প্রকল্প নিয়ে গেলে ফেলে রাখেননা। তিনি সাথে সাথেই অনুমোদন দিয়ে দেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। আগামীতেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি সারাদেশের উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শক্তি, সমর্থন ও সহযোগিতার আহ্বান জানান।