ইউএনবি::
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলনের পরও ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। অবশ্য দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম রাজীব নিহত হন। ওই ঘটনায় নিরাপদ সড়ক ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন।
নৌ, রেল ও সড়ক পরিবহন সেক্টরে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী- ২০১৮ সালে ৪৩১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪৫৮০ জন নিহত এবং ১০৮২৮ জন আহত হন। অন্যদিকে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৬২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৮৬২১ জন আহত হয়েছেন।
‘বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক পত্রিকা এবং ৯টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
মহাসড়ক, জাতীয় মহাসড়ক এবং জাতীয়, আন্তজেলা এবং আঞ্চলিক সড়কে এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
সাংবাদিকদের প্ল্যাটফর্ম গত বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা হ্রাসের কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে সারা বছর গণমাধ্যমে সড়ক পরিবহন সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর রাস্তায় সক্রিয় উপস্থিতি, ত্রুটিযুক্ত যানবাহন এবং ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মীদের এবং মোবাইল কোর্টের দায়িত্ব বৃদ্ধি, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট চিহ্নিত করে সেখানে সতর্কতা চিহ্ন স্থাপন এবং রাস্তা মেরামত।
প্রতিবেদন অনুযায়ী- গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৭১ শিশুসহ ৪১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৭২৫ জন আহত হয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৪০১টি দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে ৪১৫ জন মারা যান এবং ৮৮৪ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন মহিলা ও ৬২টি শিশু।
মার্চে ৩৮৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ নারী ও ৮২ শিশুসহ ৩৮৬ জন নিহত হন এবং আহত হন ৮২০ জন। এপ্রিলে ৩২৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন ৩৪০ জন এবং আহত হন ৬১০ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন নারী এবং ৫৩টি শিশু।
মে মাসে ২৯৭টি দুর্ঘটনায় ৪৭ নারী ও ৪৪ শিশুসহ ৩৩৮ জন নিহত এবং ৫০৪ জন আহত হন। জুনে ৩৬৭টি দুর্ঘটনায় ৪৯ নারী ও ৬৯ শিশুসহ ৪৩৯ জন নিহত এবং ৮১৮ জন আহত হন।
জুলাইয়ে ৩১১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ৪৬ নারী ও ৪০ শিশুসহ ৩৪৮ জন নিহত এবং ৫১৩ জন আহত হন। আগস্টে ৩৩৭টি দুর্ঘটনায় ৪৭ নারী ও ৫৭ শিশুসহ ৩৯৮ জন নিহত এবং ৮২৩ জন আহত হন।
সেপ্টেম্বরে মোট ৩৬৭টি দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত এবং ৮২৮ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন নারী এবং ৬৪টি শিশু।
অক্টোবরে ৩৫৬ দুর্ঘটনায় ৫৫ নারী ও ৭৮টি শিশুসহ ৩৯৮ জন নিহত এবং ৬৬৭ জন আহত হন। অন্যদিকে নভেম্বরে ৩৪২ দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৭১ শিশুসহ ৩৪২ জন নিহত এবং ৭২৫ জন আহত হন। ডিসেম্বরে ৩৮৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪৭ নারী ও ৫৭ শিশুসহ ৪৪৬ জন নিহত এবং ৬৮১ জন আহত হন।
এসসিআরএফ এর সভাপতি আশীষ কুমার দে বলেন, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে অধিকাংশ মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটরিং ও তদারকিরও ঘাটতি ছিল, যোগ করেন তিনি।
এসসিআরএফ এর পর্যবেক্ষণ আরো বলছে, আঞ্চলিক সড়ক ও আন্তঃজেলা সড়ক ও মহাসড়কে ছোট এবং স্থানীয় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সমস্ত বাস ও ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তুষ্টি এবং সড়ক পরিবহন খাতে সামগ্রিক নৈরাজ্যও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।