স্টাফ রিপোর্টার ::
দিরাইয়ে ৫ বছরের শিশু তুহিন হত্যায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তুহিনের মা সহ ৫জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে সাক্ষীদের কেউই ঘটনা দেখেননি বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
এদিকে গত শনিবার ভোরে তাহিরপুরে সাত বছরের শিশু তোফাজ্জলের চোখ উপড়ানো বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ফুফু, দুই চাচাসহ ৭ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার দুপুরে তাহিরপুরের আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুইজনকে ৫ দিন এবং ৫ জনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ফুফু শিউলি, তার স্বামী সেজাউল, শ্বশুর কালা মিয়া, চাচা লোকমান হোসেন ও প্রতিবেশী হবি মিয়া, রাসেল মিয়া ও সোলেমান মিয়াকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের আব্দুল বাছিরের ছেলে তুহিন মিয়া নৃশংসভাবে খুন হয়। পুলিশের চার্জশিটে, চাচা নাসির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ারের জবানবন্দিতে বাবা ও চাচাসহ স্বজনরাই হত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দুই দফা রিমান্ডে নেওয়া হলেও বাবা আব্দুল বাছির ছেলে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেননি। তুহিনকে ঘুম থেকে তুলে জবাই করে কান ও লিঙ্গ কেটে পেটে দুটি ছুরি বিদ্ধ করে গাছে নৃশংসভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় বাবা, তিন চাচা ও চাচাতো ভাইকে দায়ি করে গত ৩০ ডিসেম্বর চার্জশিট প্রদান করেছে পুলিশ।
এই মামলায় তুহিনের বাবা আবদুল বাছির (৪০), চাচা নাসির উদ্দিন (৩৫), মাওলানা আবদুল মছব্বির (৪৫) ও জমসেদ আলী (৬০) এবং ১৭ বছর বয়সী চাচাতো ভাই জেল হাজতে আছেন। আদালতে গত ৭ জানুয়ারি বিচারকাজ শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুরে আলোচিত এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান শিকদারের আদালতে মামলার বাদী তুহিনের মা মনিরা বেগম, এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ তালুকদার, শাহজাহান মিয়া, নুর উদ্দিন ও হারুন মিয়া সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের সবাই হত্যাকা- দেখেননি বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
আদালতকে তুহিনের মা মনিরা বেগম বলেন, গত ১৩ অক্টোবর রাতে বাবার সাথে একই খাটে ঘুমিয়েছিল তুহিন। তিনি ওইদিন পাশের কক্ষে ছিলেন। শেষ রাতে তুহিনের চাচাতো বোন তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে জানায়, তুহিনের বসতঘরের দরোজা খোলা। এসময় দেখেন ঘুমন্ত তুহিনের বাবার পাশে তুহিন নেই। পরে সকালে জানতে পারেন তুহিনকে কে বা কারা হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। কে বা কারা তুহিনকে হত্যার করেছে, তিনি তা জানেন না বলে আদালতকে জানান।
মামলায় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, আলোচিত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বাদী মনিরাসহ ৫জন সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের কেউই বলেননি হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন।
অন্যদিকে গত শনিবার ৭ বছরের শিশু তোফাজ্জল হোসেনের চোখ উপড়ে বস্তায় লাশ ভরে বাড়ির পেছনে ফেলে রাখার ঘটনায় ফুফু দুই চাচাসহ ৭জনকে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে আদালতের বিচারক শুভদীপ পাল আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৮ জানুয়ারি বাঁশতলা গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয় শিশু তোফাজ্জল। এ ব্যাপারে ৯ জানুয়ারি শিশুর দাদা জয়নাল আবেদীন থানায় একটি জিডি করেন। ৯ জানুয়ারি ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবির বসতঘরের বারান্দায় শিশুর পায়ের এক জোড়া জুতাসহ একটি চিরকুট লেখা পান শিশুর পিতা জুবায়ের হোসেন। ১১ জানুয়ারি শনিবার ভোরে শিশুর একটি চোখ উপড়ে ফেলা এবং একটি পা ভাঙা অবস্থায় বস্তাবন্দি লাশ বাড়ির পিছনে প্রতিবেশী হবি মিয়ার ঘরের পেছন থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ৭ জন কে আটক করে রোববার দুপুরে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত সোমবার দুইজনকে ৫ দিনের ও ৫জনকে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. আশেক সুজা মামুন রিমান্ড মঞ্জুরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।