হাওর ডেস্ক ::
প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না । আর কমানো হবে বইয়ের বোঝা । প্রাথমিকে তিনটি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে সব শিক্ষার্থী ১০ বিষয় পড়বে । ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশে স্কুলে শিশুদের পরীক্ষা ও পড়াশোনার চাপ কমাতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা । এই বিষয়ে এবার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার । যার প্রেক্ষিতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়া হচ্ছে । ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য থাকবে একই বই। বিভাগ বেছে নিতে হবে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আরো কিছু প্রস্তাব নিয়ে আমরা কাজ করছি । ধাপে ধাপে এগুলো বাস্তবায়ন হবে । কিছু চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলো শেষ পর্যন্ত কিভাবে চূড়ান্ত হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না । এনিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে । এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিকে তৃতীয় শেণি পর্যন্ত কোনো পাশ-ফেল থাকবে না, থাকবে না কোন বার্ষিক পরীক্ষাও । তবে একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি থাকবে । যা প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে নেয়া হবে। শিক্ষকেরা নিজেরাই মূল্যায়ন করবেন । শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে চতুর্থ এবং পঞ্চম শেণিতে । একই সঙ্গে বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে এমন ব্যবস্থা করা হবে যে ছাত্ররা ক্লাসেই শিখবে । এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাই একই ধরনের বই পড়বে। সায়েন্স, আর্টস ও কমার্স ভাগ থাকবে না । মাধ্যমিকের পরীক্ষা হবে দশম শ্রেণির সিলেবাসে ।
অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন,‘প্রি পাইমারি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম নিয়ে আমরা কাজ করছি । ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য একই বই থাকবে । বিভাগের প্রশ্ন আসবে উচ্চ মাধ্যমিকে । আর একাদশ শ্রেণিতে একটি পাবলিক পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে আরেকটি পাবালিক পরীক্ষা নিয়েও কাজ হচ্ছে।
২০২১ সাল থেকে প্রাথমিকে প্রথম শেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ার কাজ চলছে বলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চেয়ারম্যান জানান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে । তিনি চান শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের বোঝা এবং পরীক্ষার চাপ কমানো হোক।
নারায়ন চন্দ্র সাহা জানান,‘২০২১ সাল থেকে ষষ্ঠ শেণিতে সবাইকে ১০টি বই দেয়া হবে৷ ২০২৫ সালে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে যাবে৷’
এখন ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪টি বই পড়তে হয়৷ নতুন নিয়মে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই ১০টি বই পড়তে হবে৷ বইগুলোর বিষয় এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যাতে একাদশ শ্রেণিতে যে যার পছন্দমত বিভাগ বেছে নিতে পারে৷
প্রাথমিকেও বইয়ের সংখ্যা কমানোর কাজ চলছে৷ এখন গড়ে ছয়টি বই পড়তে হয়৷ নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘প্রাথমিকে বই কমিয়ে টিচার্স গাইড করা হবে৷ ওই গাইড অনুয়ায়ী শিক্ষকরা ক্লাসে পড়াবেন৷ কিন্তু ছাত্রদের কোনো বই থাকবে না৷”
এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘প্রাথমিকে মাত্র তিনটি বই থাকবে, বাংলা , ইংরেজি ও গনিত । আর অন্য যেসব বিষয় আছে তা অ্যাকটিভ লার্নিং-এর আওচায় চলে যাবে । শিশুরা খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিখবে । শিক্ষকরা গাইড হিসেবে কাজ করবেন৷ তাদের জন্য নির্দেশিকা থাকবে।
তিনি আরো জানান, ‘২০২১ সালে প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে এবং ‘ফেল’ বলতে কিছু থাকবে না৷ প্রতিদিনের মূল্যায়নে কোনো শিক্ষার্থী যদি দুর্বল হয় তাকে বিশেষ যত্নের মাধ্যমে তুলে আনার দায়িত্ব শিক্ষকের।
চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা দুটোই থাকবে আংশিক ভাবে৷ দেশের ১০০টি স্কুলে এই বছরের প্রথম চার মাস অ্যাকটিক লার্নিং-এর পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করা হয়েছে৷