হাওর ডেস্ক ::
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন কেন্দ্র পাহারার নামে ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা’ ভোটের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। একটা বিষয় খুব উদ্বেগজনক, সেটা হচ্ছে নির্বাচনকে সমনে রেখে বহিরাগতদের জড়ো করা এবং অস্ত্রধারীরাও এর মধ্যে আছে।”
নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি ‘জরুরি ভিত্তিতে’ দেখার আহ্বান জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা বলেন, “অভিযোগ আছে, খবর আছে- নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে পাহারার নামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিবেশ বিঘ্নিত করতে পারে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে। সেই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।”
বহিরাগতদের উপস্থিতি কোন দলের বেশি- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের কাছে ইনফরমেশন হচ্ছে বিএনপি সারা বাংলাদেশ থেকে বহিরাগতদের এনে ঢাকায় জড়ো করছে। এদের মধ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দাগী সন্ত্রাসীরাও রয়েছে। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
আওয়ামী লীগ নেতারা যেখানে বিএনপিকে ‘ভঙ্গুর’ দল হিসেবে বর্ণনা করেন, সেখানে তারা যদি সত্যিই সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করতে পারে কি না এবং সুসংগঠিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেক্ষেত্রে কী করছে- সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল সেতুমন্ত্রী কাদেরকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করে… এখনতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত। নির্বাচন কমিশন যেভাবে আদেশ দেবে, নিয়ন্ত্রণ করবে, তারা সেভাবে চলবে।”
কাদের বলছেন, তিনি নিজে বিএনপিকে ‘ভঙ্গুর দল’ বলতে রাজি নন।
“এভাবে বলা ঠিক নয়। বিএনপি আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির একটা প্ল্যাটফর্ম। কাজেই এই শক্তিকে একেবারে দুর্বল বা ভঙ্গুর বলা আমি মনে করি সমীচীন নয়। তাদেরও সমর্থন আছে। দলের অবস্থা খারাপ থাকলে সন্ত্রাসী থাকবে না এমন তো নয়। তাদের সমর্থক সারা বাংলাদেশে আছে, এটা হল বাস্তবতা।”
সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কাছে আওয়ামী লীগ কী অনুরোধ করবে- এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন অশুভ কোনো তৎপরতা বন্ধ করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের নজরদারি থাকতে হবে।
“বহিরাগতদের নজরদারিতে রাখা। অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কাজে লাগতে হবে, যাতে এরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বাধা না হয়।”
বিএনপির অভিযোগ ছিল, গত জাতীয় নির্বচানে তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে করে দেওয়া হয়েছে। এবারও তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আচারণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, “বিএনপি তো জাতীয় নির্বাচনে এজেন্ট দিতেই পারেনি, পরে বলেছে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের এজেন্ট ছিল না- সেটার দায়দায়িত্ব কি আমরা নেব?
“বিএনপিকে জিজ্ঞাসা করুন, কেন তারা এজেন্ট দিতে পারেনি, তাদের কর্মী সঙ্কট কেন? এজেন্ট আসার পথে আমরা কোনো বাঁধা দেব না দলীয়ভাবে।”
নির্বাচনে ‘ফাঁকফোকরের’ কোনো অবকাশ থাকবে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচনে ৬৭ জন বিদেশি ও এক হাজারের বেশি পর্যবেক্ষক আছে। পর্যবেক্ষকরা তো বিষয়গুলো মনিটর করবে।
“পর্যবেক্ষণটা ভালোভাবে হোক, অন্ধকারে ঢিল ছুড়বে, এটা হয়নি ওটা হয়নি… বাধা দিয়েছে… পর্যবেক্ষকরাই দেখুক মূল্যায়ন করুক নির্বাচনটা; বাস্তবতাটা তো দেখতে পারবে। যত কেন্দ্র আছে পর্যবেক্ষণের সুযোগ বেশি।”
সরকার কিছু লোককে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচনের পর ‘ভালো’ প্রতিবেদন দেওয়া জন্য- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “এ ধরনের কোনো পর্যবেক্ষক সরকার নিয়োগ দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমরা কোনো পর্যবেক্ষকের নাম দিয়েছি- এরকম অভিযোগ দিয়ে থাকলে তথ্য প্রমাণসহ বলুক।”
ঢাকার দুই সিটির মেয়র প্রার্থীরা ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নে সরকারের সেতুমন্ত্রী বলেন,
“ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি আমাদের দেশের নির্বাচনের ইশতেহারে থাকে, বাস্তবায়ন হয় না তেমনও না।
“এর তো টার্গেট থাকে না, নির্দিষ্ট কোনো টাইম ফ্রেম তো থাকে না। ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করবেন তা জানানো উচিত।”