অনলাইন ডেক্স::
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গত ছয় মাসে ১০ অভিযানে ৩৫ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীকে। যাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর এক সাবেক কর্মকর্তাও রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, জঙ্গিদের এখন আর বড় ধরনের হামলা বা নাশকতা চালানোর সামর্থ্য নেই। তবে তাদের নাশকতার পরিকল্পনা থাকে সব সময়।
গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বন্দুকধারী জঙ্গিরা হামলা চালায়। দেশের ইতিহাসে জঙ্গিদের হামলার মধ্যে এটি হলো সবচেয়ে ভয়াবহ। হামলায় সেখানে ১৭ জন বিদেশী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হন ২৩ জন। দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার তৎকালীন ওসি সালাহউদ্দিন। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কমান্ডো অভিযানে সেখানে নিহত হয় পাঁচ বন্দুকধারী। তারা হলো রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল। এই ছয়জনের লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গুলশান হামলার মাধ্যমেই নব্য জেএমবি তাদের নাশকতার সামর্থ্যের জানান দেয়। এরপর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগ এবং রাজধানীতে ব্লক রেইড চালানো হয়। একের পর এক অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাশায়ী হয়েছে নব্য জেএমবির সদস্যরা।
গুলশানের ঘটনার সাত দিনের মাথায় ৮ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের দিন পুলিশের ওপর হামলা চালায় নব্য জেএমবি’র একটি গ্রুপ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় শফিউল নামে আরেক জঙ্গি। পরে ৫ আগস্ট র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শফিউল ও তার সহযোগী আবু মোকাতিল নিহত হয়।
গত ২৫ জুলাই কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের জাহাজ বিল্ডিংয়ে এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে গুলিতে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। যাদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় জানা যায়নি। পরিচয় পাওয়া ৮ জন হচ্ছে দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইলের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার ধানম-ির তাজ-উল-হক রাশিক, ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান, ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান, রংপুরের রায়হান কবির ওরফে তারেক এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন। আহত অবস্থায় একজন গ্রেফতার হয় এবং একজন পালিয়ে যায়। এই নয়টি লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট সকালে নারায়ণগঞ্জে ‘হিট স্ট্রং-টোয়েন্টি সেভেন’ নামে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হয় নব্য জেএমবির সংগঠক তামিম চৌধুরী। নিহত তার দুই সঙ্গী ফজলে রাব্বি ও তৌফিক। আর্টিজান রেস্তোরাঁর হামলার পর থেকেই তামিমকে খুঁজছিল পুলিশ ও গোয়েন্দারা। কানাডাপ্রবাসী তামিম বেশ কিছু দিন ধরেই জঙ্গিদের সংগঠিত করছিল। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে আগে থেকেই এ তথ্য ছিল। আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা এবং কল্যাণপুরে উগ্রবাদী আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত রিগ্যানের কাছ থেকে তামিম সম্পর্কে জানার পরে সে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছিল পুলিশ গোয়েন্দাদের কাছে। গত ১৫ ডিসেম্বর এই তিনটি লাশও জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ রূপনগরের ৩৩ নম্বর সড়কের ৩৪ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে অবস্থান করছিল জঙ্গিদের অন্যতম সংগঠক মেজর জিহাদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ। এ সময় জঙ্গিদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রূপনগর থানার ওসি শহিদুল আলম, ইন্সপেক্টর তদন্ত শাহীন ফকির, এসআই মোমিনুর রহমান ও এএসআই বোখারী আহত হন। পুলিশের গুলিতে সেখানে নিহত হয় জঙ্গি জাহিদুল। জাহিদুলের লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর আজিমপুরের ২০৯/৫ পিলখানা রোডের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে নিহত হয় নব্য জেএমবির সদস্য তানভীর কাদেরী ওরফে আবদুল করিম ওরফে শামসাদ। সেখান থেকে তিন নারীকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো নব্য ধারা জেএমবির শীর্ষনেতা নূরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তী (২৫), নিহত উগ্রবাদী তানভীর কাদেরী ওরফে আবদুল করিমের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা (৩৫) এবং আরেক উগ্রবাদী নেতা জামান ওরফে বাসারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন (২৩)। তানভীর কাদেরীর লাশ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
গত ৮ অক্টোবর পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে নিহত হয় ১১ জঙ্গি। এর মধ্যে গাজীপুরের পাতারটেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযান ‘অপারেশন শরতের তুফান’-এ নিহত হয় সাত জঙ্গি। এ ছাড়া গাজীপুরের হাড়িনালে র্যাবের অভিযানে নিহত হয় দুই জঙ্গি। অপর দিকে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাগমারা মির্জামাঠ এলাকায় র্যাবের অভিযানে নিহত হয় দুই জঙ্গি।
সবশেষ গত শুক্রবার রাত ১২টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট দক্ষিণখান থানার পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে এক নারী ও এক কিশোর জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে দুই নারী ও তাদের দুই সন্তান। নিহত নারী জঙ্গির আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে আহত হয় তার শিশুকন্যা। ওই শিশুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিটিটিসি’র প্রধান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহত নারী জঙ্গি নেতা সুমনের স্ত্রী। একই ঘটনায় নিহত কিশোর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত তানভীর কাদের সিদ্দিকী ওরফে করিমের যমজ ছেলের একজন। তার অপর ছেলে আগেই পুলিশের হাতে আজিমপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।