সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার বৃহত্তম একটি ইউনিয়নের নাম নোয়ারাই ইউনিয়ন। ইউনিয়নের দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে সুরমা নদী। বিশাল এলাকা জুড়ে নাইন্দার হাওরের অবস্থান। পৃথিবীর বৃহত্তম হাওর অঞ্চল বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল। সিলেট অঞ্চলের বৃহত্তম হাওরগুলির মধ্যে নাইন্দার হাওরের নামটিও অন্তুর্ভূক্ত রয়েছে। সমগ্র ইউনিয়নের দুই তৃতীয়াংশ লোকের খাদ্য ফলে নাইন্দার হাওরের বোর ফসল থেকে। হাওরের দক্ষিণ পার্শ্বে সুরমা নদী। সুরমার বাকে উত্তর পারে
রয়েছে সবুজে ঘেরা শ্যামল স্মিগ্ধ গ্রামগুলির মধ্যে বেতুরা, আছদনগর, বুড়াইরগাঁও, মির্জাপুর লক্ষিবাউর, কাড়ইলগাঁও, চরভাড়া, বারকাহন, ভাজনামহল, পাটিভাগ, বাতিরকান্দি, ঠেংগারগাঁও। উত্তর পার্শ্বে রয়েছে মাওড়াটিলা, শাহ্ আরফিন নগর, বাঁশটিলা, বড়গল্লা। পশ্চিম পার্শ্বে আছে চানপুর, রংপুর, কঠালপুর, উলুরগাঁও গ্রাম। উত্তর-পশ্চিমে আছে বিশনাই হাওর সংলগ্ন কচুদাইড় গ্রাম। পল্লী কবি ও আধ্যাতিক সাধক দূর্বিনশাহ্ ও রমিজ শাহ স্মৃতি বিজড়িত নোয়ারাই ইউনিয়নে ১৯৩৮ইং সনে আসাম বেঙ্গল ছাতক সিমেন্ট কারখানা স্থাপিত হয়। ১৯৯৮ইং সনে স্থাপিত হয় বিশ্বখ্যাত লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট
কোম্পানী। সিমেন্ট কোম্পানী দুটিই এখন ছাতক পৌরসভায় অন্তুর্ভূক্ত। স্বাধীনতা পূর্ব ২৪ বৎসর ও স্বাধীনতা উত্তর ২২/২৩ বৎসর পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম ছাতক সিমেন্ট কারখানার এক কনা সিমেন্টও নোয়ারাই ইউনিয়নের রাস্তা ঘাটে পড়ে নাই। এটা নোয়ারাই ইউনিয়নবাসীর আক্ষেপ ও আফসোসের বিষয়। ছাতক শহর সংলগ্ন নোয়ারাই ইউনিয়নের অবস্থান থাকলেও ছাতকের সাথে নোয়ারাই
ইউনিয়নবাসীর যোগাযোগ ছিল ছয় মাস পায়ে আর ছয় মাস নায়ে। নব্বই দশক থেকে নোয়ারাই ইউনিয়নের রাস্তা ঘাট উন্নয়ন হচ্ছে তা নির্দ্ধিধায় বলা যায়। বিশাল নাইন্দার হাওর পারের মানুষের চোখের পানি আর নাইন্দার হাওরের পানি একাকার হওয়ার দুটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ: হাওরের দক্ষিণ পার্শ্বে সুরমা নদীর সাথে সংযোগ খালের নাম লক্ষীবাউর খাল। পাহাড়িয়া ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাইলে লক্ষীবাউর খাল দিয়ে হাওরে পানি ঢুকে বোর ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতি বৎসর পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বোর ফসল রক্ষার জন্য লক্ষীবাউর খালে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে মাটির বাঁধ দেয়া হয়। দ্বিতীয় কারণ: পানি নিচের দিকে গড়ায় তা চিরন্তন সত্য। প্রকৃতির লীলায় হাওর সাধারণতঃ নিচু জায়গায় অবস্থান। নাইন্দার হাওরের উজানে রয়েছে উচু এলাকা। অতিবৃষ্টি জনিত কারনে বৃষ্টির সমগ্র পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। যেমন দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের উচু এলাকায় বৃষ্টির পানি খুদখাল হয়ে নোয়ারাই ইউনিয়নের
ছনখাইড় খাল, কুরীয়াখাল হয়ে মাগুরা গাং দিয়ে নাইন্দার হাওরের গোয়ালকই অংশে জমা হয়ে
সমগ্র হাওর সাদা হয়ে যায় এবং ঘোলাদাইড়, তেলিখাল হয়ে অতিবৃষ্টির পানি নাইন্দার হাওরে
জমা হয়। ইহাতে নাইন্দার হাওরে বিশাল জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং সম্পুর্ণ বোর ফসল
সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের একমাত্র অবলম্বন লক্ষীবাউর খাল। কিন্তু লক্ষীবাউর খালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ থাকায় জলাবদ্ধ পানি নদীতে নিষ্কাষন হইতে পারে না।
দুইটি কারনের সমাধান: নাইন্দার হাওর পাড়ের মানুষের কান্না নিবারনের জন্য নাইন্দার
হাওরকে “হাওর উন্নয়ন মহা পরিকল্পনার” অর্ন্তুভূক্ত করে ঘোলাদাইড়, তেলিখাল, মাগুরা গাংগের
নাইন্দার হাওরের প্রবেশ মুখ হইতে বাঁধ দিয়ে খাল খনন করে সাহেব খালের সাথে সংযোগ করে দিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি অতি বৃষ্টি জনিত পানি হাওরে না ঢুকে সুরমা নদীতে প্রবাহিত হবে। পাহাড়িয়া ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি হইলেও সাহেব খাল দিয়ে সুরমা নদীর পানি আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নাইন্দার হাওরে প্রবেশ করে। এর অনেক আগেই বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। লক্ষীবাউর খালে প্রতি বৎসর লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে মাটির বাঁধ না দিয়ে স্লুইস গেইট নির্মাণ করলে সুরমা নদীর পানি নাইন্দার হাওরে ঢুকবে না এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে হাওরের জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হবে। ফলে নাইন্দার হাওরপারের মানুষের কান্না নিবারণ হয়ে মানুষের চোঁখে-মুখে হাসি ফুটবে বলে বিশ্বাস।
##
লেখক: সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, ছাতক।