হাওর ডেস্ক ::
জননিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সততা, সাহস ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম জাতীয় সমাবেশে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আনসার ও ভিডিপি (গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী) সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জননিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন এটাই আমাদের আশা। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে শিগগিরই ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
সরকারের উন্নয়ন কাজে এই বাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে উন্নয়ন কাজে আরও সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাবেন সে আশা পোষণ করছি।
আনসার ও ভিডিপি প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতা বর্তমানে সর্বজন স্বীকৃত।
‘জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপালনসহ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও মৌলবাদ নির্মূলে আনসার বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় এ বাহিনীর সদস্যরা ‘এভসেক (এভিয়েশন সিকিউরিটি)’ এর অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। দেশ ও জনপদকে নিরাপদ রাখতে দু’টি নারী ব্যাটালিয়নসহ এ বাহিনীতে ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় এ বাহিনীর ১৬টি ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া নবগঠিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কূটনৈতিক এলাকা, কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং দেশের বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
খেলাধুলায় আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সফলতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা খেলাধুলা ও দেশীয় সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বাড়াচ্ছে। সদ্যসমাপ্ত এসএ গেমসে বাংলাদেশের অর্জিত ১৪২টি পদকের মধ্যে ৬৮টি পদক অর্জন করেছে এ বাহিনীর খেলোয়াড়রা।
তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৬১ লাখ সদস্য রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন’ প্রণয়ন করার কার্যক্রম সরকার হাতে নিয়েছে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ও আম্রকাননের নিরাপত্তার জন্য দু’টি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
একটি গার্ড ব্যাটালিয়নসহ চারটি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন, ব্যাটালিয়নের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে জনবল বৃদ্ধি, আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ঝুঁকিভাতা প্রবর্তনসহ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের জনগণের উন্নয়নের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এই স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষ পাবে। প্রতিটি গ্রামকেই আমরা, মানুষ যেন শহরের সুবিধা পায়, গ্রামের মানুষও নাগরিক সুবিধা পাবে, প্রতিটি গ্রাম হবে শহরের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নগর।
দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবছর ১৪৩ জনকে ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
হেলিকপ্টারে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের সফিপুরের আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ।
এরপর প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্যারেড পরিদর্শন শেষে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিবেশন করা হয়। অভিবাদন মঞ্চে থেকে প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন।
কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দেন প্যারেড কমান্ডার মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান।
কুচকাওয়াজের নৈপূন্যের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছরই উৎকর্ষতা বাড়ছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন তুলে ধরা হয়।