স্টাফ রিপোর্টার::
দেড় দশক পর সুনামগঞ্জ পৌর শহরের দাশপাড়া এলাকায় এক লন্ডনপ্রবাসী প্রভাবশালীর দখল থেকে সরকারি ড্রেন উদ্ধার করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মানিক মিয়ার নামের এক প্রভাবশালী লন্ডনপ্রবাসী অবৈধভাবে পৌরসভার মালিকানাধীন একটি ড্রেন ও এলাকাবাসীর চলাচলের রাস্তায় দেয়াল তুলে সেখানে অবৈধ স্থাপনা করে এলাকার ৫০ পরিবারকে দুর্ভোগে ফেলে রেখেছিলেন। অপসারণের ফলে প্রায় ১৫ বছর পর অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে এলাকার ৫০টি পরিবার। তারা প্রবাসীর এই অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ায় পৌর মেয়র নাদের বখত ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় ১৫ বছর আগে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী মানিক মিয়া পৌরসভার দাশপাড়া এলাকার পৌরসভার মালিকানাধী একটি ড্রেন দখল করে জোরপূর্ববক দেয়াল নির্মাণ করে পাড়ার ৫০টি পরিবারের চলাচল পথ সংকুচিত করে দেন। ফলে চরম বিপাকে পড়েন পাড়ার বাসিন্দারা। সরুপথ দিয়ে তারা গত ১৫ বছর কোনভাবে চলাচল করছিলেন। একাধিকবার এলাকাবাসী প্রবাসীর অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করলেও তার প্রভাবের কারণে নিরব থাকে পৌর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এলাকাবাসী আবারও পৌর মেয়র নাদের বখতের কাছে অবৈধ ওই স্থাপনা অপসারণের লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রবাসী মানিক মিয়াকে একাধিকবার নোটিশ করে ওই স্থাপনা অপসারণের আহ্বান জানালে তিনি সময় ক্ষেপন করেন। অবশেষে বৃহষ্পতিবার পৌর মেয়ার নাদের বখত বোলডোজার পাঠিয়ে ওই স্থাপনা অপসারণ করেন। এতে খুশি হয়ে ৫০ পরিবারের লোকজন আনন্দ মিছিল করে পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
দাশপাড়া এলাকার বাসিন্দা সোনালী বেগম বলেন, ১৫ বছর পর আমাদের মুক্তি হলো। এই ড্রেনের রাস্তা দিয়ে একসময় আমাদের যাতায়াত ছিলো। কিন্তু লন্ডন প্রবাসী ওই ড্রেনের রাস্তা দখল করে নেন এবং ওই জায়গায় দেয়াল নির্মাণ করে দেওয়ায় আমাদের চলাচলে অনেক সমস্যা হতো। আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছি। আগের মতো আমরা এই রাস্তা ব্যবহার করতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি আবেদন করে মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের সুপারিশও দিয়েছিলাম।
একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের কিশোর বয়স কেটেছিলো এই রাস্তা ব্যবহার করে। প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ, নদী থেকে পানি নিয়ে আসাসহ সকল কাজেই আমরা এই রাস্তা ব্যবহার করতাম। কিন্তু লন্ডন প্রবাসী মানিক মিয়া তার ক্ষমতার অপব্যবহারে এখানে দেয়াল তৈরি করে দিয়ে আমাদের চলাচলে বাধা প্রদান করেছেন। অনেকবার উনাকে আমরা অনুরোধ করলেও উনি কোন তোয়াক্কা করেন নি। আমরা ১৫ বছর কষ্ট করেছি।
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৃজন দেবনাথ বলেন, এই দেয়ার ভাঙার মাধ্যমে এই এলাকার মানুষ লন্ডন প্রবাসীর জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত পেয়েছে। একজন লন্ডন প্রবাসী সরকারি জায়গা দখল করে ১৫ বছর ভোগদখল করেছেন। আজকে আমরা খুশি।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, পৌরসভার জায়গা ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে সেই জায়গার উপর কোন ব্যক্তি দেয়াল তুলতে পারেন না। আমরা সেটি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি তিনি অবৈধভাবে ড্রেনটির উপর দেয়াল ও বাথরুম নির্মাণ করেছেন তাই সেটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কাজ পুনারবৃত্তি হলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।