বাবর বখত::
আশির দশকের আজকের এই দিনটি সুনামগঞ্জের শিল্প-সাহিত্যের জন্য এক অবিষ্মরণীয় ও অনন্য দিন। সুনামগঞ্জের এর একদল টগবগে তরুণ সৃষ্টির উন্মাদনায় ব্যতিক্রমধর্মী এক আয়োজনের জন্ম দিয়েছিল। সুনামগঞ্জের এর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন ধারার অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল তাদের হাত ধরে।
অনুষ্ঠানে আধুনিকতা আনার জন্য, অনুষ্ঠান কে সাবলিল ও শ্রুতিমধুরের প্রয়াসে প্রথম বারের মত পুরুষ এবং মেয়ে কন্ঠে অনুষ্ঠানের প্রচারণা চালানো হয়েছিল। শহরের অলিগলিতের বেজেছিল মাইক। এতে কণ্ঠ দিতেন কখনো সাবেরীন এবং নারগিস, কখনো রুবিনা লেইছ কখনো বা রোনা লেইছ, বদরুল হক চৌধুরী, রাহেলা খানম রাজনু সহ অনেকে।
প্রচারে ভিন্নতার কারণে সবার নজর থাকত ৩১ শে ডিসেম্বর এই দিনটির প্রতি। তখনকার দিনে একটি অনুষ্ঠান করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হতো। ছাত্রাবস্থায় চাঁদা তোলা খুব সুখকর ছিলো না। তবু আমরা সুনামগঞ্জের স্থানীয় শিল্পী, পেশাজীবি, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এ কারণে এখনো আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা তাদের বিশ্বাস , ভরসা ও সাহায্যের কারণে আমরা আমাদের প্রাণের আকুতিমাখা এ অনুষ্ঠানটি দীর্ঘ বছর চালিয়েছি। সুনামগঞ্জের সাহিত্যান্দোলের প্রাণের এই অনুষ্ঠাননকে ঘিরে অনেক ভালোলাগা, ভালোবাসা, অনুরাগ, খুনসুটি, অনেক রাতজাগা গল্প জড়িয়ে আছে।
তখন সুনামগঞ্জ ছিল মাত্র দশ হাজার মানুষের বসতি। সবাই সবার চেনা জানা, আপন। একটা যৌথ পরিবারের মত ছিল বসবাস। সে কারণে নারী, পুরুষ দল বেঁধে উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান উপভোগ করত । ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত এবং পুরনো বছর কে দেশের গান এবং কবিতার মধ্যে দিয়ে বিদায় জানানো হতো। এটাই ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল। এত বড় একটি প্ল্যাটফর্মে শিল্পী, কবিদের একত্রিত করা খুব সহজ কাজ ছিল না।
যাদের উদ্যোগ এ এই অসম্ভব কে সম্ভব করা হয়েছিল তাদের কথা না বল্লেই নয়।
মূল উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রথম যাদের নাম আসে তারা হলেন, সায়েজ বদরুল হক চৌধুরী, সাব্রী সাবেরীন, বাবর বখ্ত, আবদুল আলীম কামাল, তৌফিক দোলন। পড়ে বিভিন্ন সময়ে কাজের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে আমাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে আমাদের আরো কিছু বন্ধু কে সংযুক্ত করেছিলাম। তারা হলেন রহুল তুহিন, মাহবুব, সামী, নওসাদ মসরু, সামীম সামাদ, অপু, মাসুদ চৌধুরী সহ আর অনেকে।
সুনামগঞ্জ এর উদারমনা সাংস্কৃতিক পরিবার যাদের কে আমাদের এই লং জার্নিতে পাশে পেয়েছিলাম তারা হলেন লেইছ পরিবার। গানের ক্ষেত্রে পেয়েছিলাম অনেককে। তারা বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের অনুষ্ঠানকে নিজের অনুষ্ঠান মনে করে গান করতেন। পরামর্শ দিয়েছিলেন। দিগি¦জয় চৌধুরী, সুহেল আহমদ, রওনক আহমদ, দিলওয়া আহমদ, উৎপল খাসনবিস, দেবদাস চৌধুরী, অলক চক্রবর্তি বাপ্পা, তুলিকা সহ আরো অনেকে।
দীর্ঘ প্রবাস যাত্রার কারণে এই মূহুর্তে অনেকের নাম মনে করতে পারছিনা। এজন্য আমি দুঃখিত।
প্রতি বছর এই দিনটি আসে কিন্তু ‘শেষ বিকেলের কবিতা ও গান’ অনুষ্ঠানটি না করার বেদনায় প্রবাসে বসে মন কাঁদে।
লেখক: আমেরিকা প্রবাসী কবি ও গীতিকার।