সাজ্জাদ হোসেন শাহ্,:
সম্প্রতি বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় করোনা ভাইরাস। বিশ্বজুড়ে মানুষ নিজেদের এবং তাদের পরিবারকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও ৩ জনের দেহে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে দেশের সকল জায়গায় অতিরিক্ত জনসমাগমজনিত সকল অনুষ্ঠানমালায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। এমনকি ১৭ই মার্চের মুজিব বর্ষের বড় বড় জনসমাগমকৃত অনুষ্ঠানসূূহ জনসাধারণের সুস্থতার কথা বিবেচনা করে স্থগিত করে শুধু মূল অনুষ্ঠানসমূহ করা হয়েছে।
ঠিক এই সময়ে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় হযরত শাহ্ আরেফিন (র:)’র ওরস এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ পূণ্য¯œান পণতীর্থ স্নান ও বারুণী মেলা নিয়ে দেখা দিয়েছে ভিন্নমত। স্থানীয় সচেতন মহলের পক্ষ থেকে সতর্কতা ও সাবধানতার অংশ হিসেবে এবারের এ আয়োজন ৩ দিনের পরিবর্তে ১ দিনে সমাপ্ত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে জোর আবেদন করা হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আগামী ২২-২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হযরত শাহ্ আরেফিন (র.)’র ওরস ও পণতীর্থ স্নানে ৩ লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশংকায় একটি খোলা চিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা গিয়েছে। চিটির মূল ভাষ্য, জনসাধারণের সুস্থতার দিকটি বিবেচনা করে শাহ্ আরেফিন (র:)’র ওরশ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ পূণ্য¯œান পণতীর্থ স্নান ও বারুণী মেলা ৩দিনের পরিবর্তে ১দিনে সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ওরস উদযাপন কমিটি ও ¯œানযাত্রা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ও আমি বৈঠক করে জানিয়েছি দিয়েছি ওরস ও ¯œাসস্থলে যেন কোন ধরণের কাফেলা, দোকানপাঠ না বসে শুধুমাত্র ভক্তরা যেন তাদের ধর্মীয় কাজ শেষ করেই চলে যান এবং লোক সমাগমও যেন কম ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আমি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলেছি, ওরস ও ¯œানযাত্রা কমিটির সাথে আলাপ আলোচনা করে উভয় পক্ষের সম্মতি ক্রমে ১দিনের মধ্যে অনুষ্ঠান সমপন্ন করার জন্য।
ভাইরাল হওয়া খোলাচিটি টি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘মাননীয় জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ, এমপি সুনামাগঞ্জ-১ ও ৪ আসন, জেলা পুলিশ সুপার, কমান্ডেন্ট বিজিবি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং সুনামগঞ্জবাসি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বর্তমানে করোনা ভাইরাস আমাদের বহুল জনসংখ্যার দেশেও প্রবেশ করছে। যার জন্য ১৭ই মার্চের মুজিব বর্ষের বড় বড় জনসমাগমকৃত অনুষ্ঠানসূূহ জনসাধারণের সুস্থতার কথা বিবেচনা করে স্থগিত করে শুধু মূল অনুষ্ঠান সমূহ করা হচ্ছে। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনণ করার জন্য।
আগামী ২২-২৪ মার্চ ২০২০ খ্রীঃ (সম্ভাব্য) লাউড়ের গড় শাহ আরফিন (র:)’র ওরস ও রাজারগাঁও নবগ্রাম আখড়াবাড়িস্থিত যাদুকাটা নদীতে হিন্দু ধর্মের পুণ্যস্নানের দিন। যার ফলে এই দুই ধর্মের ভক্তবৃন্দের প্রায় ৪/৫ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। এই বিশাল জন সমাগম হওয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সমীচীন নয় ও উদ্বেগজনক বটে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায় খুব বেশি। তাই জনসাধারণের সুস্থ্যতার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এবং ভক্তবৃন্দের মনোবাসনার কথা বিবেচনা করে শাহ্ আরফিন (র:) এর ভক্তবৃন্দেরর ভক্তি প্রদান ও পুণ্যস্নান ১ দিনে শেষ করা হোক এবং ওরস ও স্নান কে কেন্দ্র করে মেলা, কাফেলা, জনসমাবেশ ঘটে এমন অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হোক।
অতএব, সম্মানিত জেলা প্রশাসক সমীপে এই আবেদন যে প্রাণজ্ঞাতি করোনা ভাইরাস এর প্রভাব বিস্তার থেকে সুনামগঞ্জ জেলাবাসী তথা দেশের সর্বসাধারণকে নিরাপদ রাখতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরুধ করা হইল।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক এমন আবেদনজনিত লেখাটিকে অনেকেই সাধুবাদ জানাচ্ছেন। অনেকে এর সাথে একমত পোষণ করে মন্তব্য করছেন। এমনকি লেখাটি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওয়ালে শেয়ারও করা হচ্ছে।