বিশেষ প্রতিনিধি
করোণাভাইরাস আতঙ্কের কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে বৃহত্তর সিলেটের সর্ববৃহৎ অসাম্প্রদায়িক লোকায়ত সমাবেশ ‘ বারুণি ¯œান ও শাহ আরেফিনের ওরস’ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২১ থেকে ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য হিন্দু মুসলমানের মিলনোৎসবে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হওয়ার কথা ছিল। সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুই ধর্মের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বৈঠক করে উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। তবে দুই উৎসবের তীর্থ এলাকার মন্দির ও মাজারের সংশ্লিষ্টরা তাদের ধর্মকর্ম পালন করতে পারবেন।
ঐতিহাসক মতে প্রায় ৫০০ বছর আগে প্রাচীন বাঙলার রাজধানী লাউড়ের তীরে যাদুকাটা নদী তীরের নবগ্রামে পণতীর্থের সূচনা করেন তাহিরপুরের নবগ্রামের সাধক শ্রী অদ্বৈত আচার্য্যৗ গোরআনা মহাপ্রভু। এরপর থেকেই প্রতি বছর এই নদীতে পূণ্য¯œান সম্পন্ন হচ্ছে। হিন্দুধর্মাবলম্বিদের মতে এই নদীতে বছরের নির্দিষ্ট দিনে মধুকৃষœার তৃতীয়া তিথিতে পৃথিবীর সপ্তবারির জল নদীতে মিশে। এতে ¯œান করলে পূণ্য লাভ হয়। তারপর থেকেই প্রতি বছর পূণ্য¯œানে আসছেন লাখো পূণ্যার্থী। তাদের বিশ্বাস যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এই পণ্য¯œান বা বারুণি ¯œান থাকবে। এখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত থেকেও পূর্ণার্থীরা আসেন।
এদিকে একই সময়ে পার্শবর্তী লাউড়েরগড় সীমান্তে মুসলিমদের লোকায়ত পীর সাধক শাহ আরেফিনের মাজারে তিনদিন ব্যাপী ওরস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবেও সব ধর্মের লোকজন অংশ নিয়ে মনোবাসনা পূরণে মাজারে মানত দেন। প্রতি বছর চৈত্র মাসের তৃতিয়া তিথীতে একই সঙ্গে এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এবার লাখো পূর্ণার্থীর উসব করোণাভাইরাসের কারণে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন দুই ধর্মের প্রতিনিধিরা। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি, পণতীর্থ ও শাহ আরেফিনের উৎসব কমিটিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ জরুরিসভায় বসেন। বৈঠকে বিরাট লোকসমাগমের কারণে করোনাভাইরাসের আশঙ্কা থাকায় সর্বসম্মতিক্রমে উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভু জন্মধাম ও বারুণি মেলা কমিটির সভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বৃহত্তর সিলেটের সবচেয়ে বড় উৎসব বারুণি ¯œান ও শাহ আরেফিনের ওরস। অসাম্প্রদায়িক এই উৎসব ৫০০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হিন্দু মুসলমানের মিলনোৎসব হিসেবে। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বের সঙ্গে আমরাও আতঙ্কিত। তাই লোকসমাগম এড়াতে উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুটি স্থানে কোন লোকসমাগত হবেনা এবার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, দুই ধর্মের প্রতিনিধিরাই উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তাই এবার শাহ আরেফিন ও বারুণি ¯œান উৎসব হবেনা। তবে দুই ধর্মের প্রতিনিধিদের যারা সার্বিকভাবে অবস্থান করেন তারা নিয়মিতই ধর্মকর্ম পালন করতে পারবেন।