বিশেষ প্রতিনিধি::
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বিশ্বনাগরিকের দৈনন্দিন জীবন বদলে দিয়েছে। প্রভাব পড়েছে স্বাভাবিক জীবনাচারে। কার্যত মানুষ এখন গৃহবন্ধী। আর্থিক মন্দার ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। অনুন্নত বিশ্বের হতদরিদ্র মানুষের দেশ বাংলাদেশেও এই প্রভাব পড়েছে ভীষণ। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কার্যত লকডাউন চলছে দেশে। এই অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবিরা চরম বিপাকে পড়েছে। মানুষের এই দুঃসময়ে হত দরিদ্রদের জন্য সুনামগঞ্জে ব্যক্তি পর্যায়ে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন অনেকে। তাই দুঃসময়ে আশার আলো চোখে দেখছেন অসহায় মানুষজন।
সুনামগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনদের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ’। ভাতাপ্রাপ্ত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ না করে একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে সেই ভাতার টাকা এলাকার মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেন। পাশাপাশি হতদরিদ্রদের সহায়তা করেন সেই ভাতার টাকায়। করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষদের কথা বিবেচনা করে ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু ঘোষণা দিয়েছেন গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ করোনায় জীবন থমকে যাওয়া দরিদ্র মানুষদেরকে আর্থিক সহায়তা দিবেন। ইতোমধ্যে ট্রাস্টিদের সম্মতিতে এক লক্ষ টাকা সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। শিগ্রই হতদরিদ্র মানুষদের হাতে এই সহায়তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে দেওয়া হবে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এম. নূরুল ইসলাম। তিনি সুনামগঞ্জ সদরের কোণাগাও গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে তিনি রাতদিন হাসপাতালে ঝূকি নিয়ে রোগিদের সেবা করছেন। এই অবস্থায় নিজের এলাকার অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১ লক্ষ টাকা সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এলাকার অন্যান্য চাকুরিজীবীদেরও সাধ্যমতো এলাকার মানুষের এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ শহরের হাজীপাড়ার বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রাহী। তিনি বর্তমানে করোনাপ্রবল দেশ আমেরিকায় আছেন। সেখান থেকেই তিনি বাসার কেয়ারটেকারকে ফোন করে অর্ধশতাধিক মানুষকে চাল ডাল ও তেল সহায়তা দিয়েছেন।
এভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে সুনামগঞ্জে মানুষের দুঃসময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই। তারা শুধু অনুদানই নয় এখনই মানবতার সেবা করার উত্তম সময় বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন। তাদের এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে অন্যরাও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবেনা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে সমমর্যাদায় বসবাস করব এই প্রত্যয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। অর্থনৈতিক মুক্তি মিলেনি। তাই বলে এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাড়াবনা-এটা হতে পারেনা। আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্ট থেকে করোনাভাইরাসে গৃহবন্ধী শ্রমজীবী মানুষের সহযোগিতার জন্য ১ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা দিব আমরা।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এম নূরুল ইসলাম বলেন, মনোবল নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। কর্তব্যে ফাঁকি দিচ্ছিনা। এই সময়ে আমার মনে পড়ছে এলাকার দরিদ্র মানুষদের। যারা দিন আনে দিন খায়। তাদের জন্য আমার হালাল রুজির ১ লক্ষ টাকা দিয়েছি। জানি এটা অল্পই। আশা করি মানুষের এই দুঃসময়ে অন্যরাও এগিয়ে আসবেন।