হাওর ডেস্ক::
করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে সহায়তার অংশ হিসেবে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করবে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের এসংক্রান্ত একটি লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবটি তুলে ধরেন। এতে রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরার চারটি কনভেনশন সিটি ও একটি ট্রেড সেন্টারকে হাসপাতালে রূপান্তরের কথা বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন বলে তাঁর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে সায়েম সোবহান আনভীর প্রধানমন্ত্রীর করোনা মোকাবেলার তহবিলে ১০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকাল রাজধানীর দুই হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের প্রস্তাবে বলা হয়, রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরার চারটি কনভেনশন সিটি ও একটি ট্রেড সেন্টারে হবে এই পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল। কনভেনশন সিটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ৩০ হাজার বর্গফুটের। বাকি তিনটি ২০ হাজার বর্গফুটের। আর ট্রেড সেন্টারের আয়তন এক লাখ ৫০ হাজার বর্গফুটের। বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিগুলো বিভিন্ন অবকাঠামোসমৃদ্ধ এবং রাজধানীর মধ্যবর্তী কুড়িল এলাকায় অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও হাসপাতালে রূপান্তরের অবস্থায় রয়েছে। এখনই উদ্যোগ নেওয়া হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এগুলোকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে চালু করা সম্ভব হবে।
১০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর
বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১০ কোটি টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস চেকটি গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন। অনুদানের চেক প্রদানের পর সায়েম সোবহান আনভীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতের বিভিন্ন সময়ের ধারাবাহিকতায় ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে’ অনুদানের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান।
বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতা পেল ২০০০ পরিবার
রাজধানীর দুই হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল বিকেল ও সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা, ভাটারা, বেরাইদ ও ডুমনি এলাকায় দুই হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারকে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এ সহায়তা কার্যক্রম যত দিন দেশ করোনামুক্ত না হবে তত দিন চলবে।
প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া খাবারের প্যাকেটগুলোয় ছিল ১০ কেজি মিনিকেট চাল, দুই কেজি মসুর ডাল, আধাকেজি আদা, এক কেজি আলু, দুই কেজি পেঁয়াজ, আধাকেজি রসুন ও এক লিটার সয়াবিন তেল। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) গতকাল রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রস্তুত করা হয় প্যাকেটগুলো। দুপুরে আইসিসিবিতে গিয়ে দেখা যায়, খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট প্রস্তুত করছেন বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তা তদারক করছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক ইমরুল হাসান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমান তুহিন, নাজমুল আলম ভুঁইয়া ও আইসিসিবির চিফ অপারেটিং অফিসার এম এম জসিম উদ্দিন।
মাহবুবুর রহমান তুহিন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নবিত্ত পরিবারকে সহায়তাসামগ্রী তুলে দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের এক হাজার পরিবার, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ৫০০ পরিবার ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৫০০ পরিবার এ সহায়তা পাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও সহযোগিতা করবে বসুন্ধরা গ্রুপ।’
জানা যায়, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফুল ইসলাম ভুঁইয়া, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আইয়ুব আনছার মিন্টু ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী তাঁদের নিজ এলাকার নিম্নবিত্ত মানুষদের তালিকা প্রস্তুত করেন। এ তালিকা অনুসারে গতকাল তুলে দেওয়া হয় সহায়তাসামগ্রী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক ভর্তি করে সহায়তাসামগ্রী নিয়ে যাওয়া হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ভাটারা, ডুমনি, বেরাইদসহ আশপাশের নানা এলাকায়। তুলে দেওয়া হয় নিম্নবিত্ত পরিবারের হাতে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এ সময় সহায়তা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন।
৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘দেশের নানা দুর্যোগে বসুন্ধরা গ্রুপ মানবতার পরিচয় আগেও দিয়েছে অনেকবার। এবারও তা দিল। গরিব ও অসহায় মানুষেরা দিন আনে দিন খায়। করোনাভাইরাসের জন্য তাদের কাজ একদম কমে গেছে। এ অবস্থায় বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতা তাদের উপকৃত করবে।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সহযোগিতা পেয়ে আপ্লুত ও অভিভূত ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামসুল ইসলাম, জরিনা আখতার, মরিয়ম বেগমসহ নিম্নবিত্তের মানুষজন। মরিয়ম বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই, দুই সন্তান নিয়ে আমি বেরাইদে থাকি। বাসাবাড়িতে কাজ করি। এখন তা বন্ধ হয়ে আছে। হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। সহায়তা পেয়ে আত্মায় পানি ফিরে পেলাম।’