এমএ মান্নানকে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদ, মতিউরকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণের দাবি
বিশেষ প্রতিনিধি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ
‘ময়মনসিংহের মতিউর সুনামগঞ্জ ছাড়ো, মতিউর হটাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ। গত ১৭ জানুয়ারির পর আবারও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এমন স্লোগান দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শান্তিগঞ্জস্থ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় সংলগ্ন মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
নেতৃবৃন্দ সজ্জন রাজনীতিবিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানকে নিয়ে ক্রমান্বয়ে কটুক্তি ও বিষোদগার করায় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের কুশপুত্তলিকাও দাহ করে সভাপতির পদ থেকে তার অপসারণ দাবি করেন। বক্তারা বলেছেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনার অস্থিত্ব রক্ষার নির্বাচন। জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে এমএ মান্নান তার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংবিধান রক্ষা করেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের টিকে থাকার এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এমএ মান্নানের বিজয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে মতিউর রহমান আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জামায়াত বিএনপির শেখানো কথায় বক্তব্য রেখে সরকারকে সমালোচিত করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার শান্তিগঞ্জ বাজারস্থ উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামন থেকে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মিছিলটি শুরু হয়। বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে প্রায় ঘন্টাব্যাপী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলেন, মতিউর রহমান ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীদের অধীনে দিরাই উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ঐ সময়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ প্রেমিক যুবকরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন তিনি প্রাণের ভয়ে সেদিন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। বরং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। তার নিকটাতœীয়রা ছিল দিরাই উপজেলার নেতৃস্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধী। পেরুয়া গণহত্যায় জড়িতরা ছিল তার আত্নীয়-স্বজন। বক্তারা বলেন, প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানের অধীনে চাকুরি করেন নি। ওই সময়ে তিনি চাকুির ছেড়ে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে সরকারি চাকুরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি আজীবন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের এক সৈনিক। এখন তিনি জাতির জনকের আদর্শ বাস্তবায়নে তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে কাজ করছেন।
বক্তারা বলেন, আমাদের প্রতিমন্ত্রী দীর্ঘদিন এমপি থাকলেও তার বিরুদ্ধে তার শত্রুরাও ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। কিন্তু মতিউর রহমান উপ-নির্বাচনে মাত্র দুই বছরের এমপি হয়ে লুটেপুটে খেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
বক্তারা আওয়ামী লীগে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে জেলা আওয়ামী লীগের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে মতিউর রহমানের অপসারণ দাবি করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হাজী তহুর আলী, জয়কলস ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাছিত সুজন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বুরহান উদ্দিন দোলন, এমএ মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারি হাসনাত হোসাইন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া, সহ সভাপতি নূর হোসাইন, উলামা লীগের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, যুবলীগ নেতা জুয়েল আহমদ, জেলা ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম শিপন প্রমুখ।
উল্লেখ্য গত ১৬ জানুয়ারি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটের নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিউর রহমান এমএ মান্নানের বিরুদ্ধে কটুক্তি করেছিলেন।