স্টাফ রিপোর্টার::
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক করোনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ করণীয় সমূহ পালনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। করোনামোকাবেলায় তার সমযোপযোগী বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টসহ সচেতন মানুষজন শেয়ার করেছেন। হাওরটুয়েন্টিফোরডটনেটের পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে হুবহু তুলে ধরা হলো।
১. যাদের হালকা জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা, শ্বাস-কষ্ট, ডায়রিয়া আছে কিনবা খাবারের স্বাদ বা ঘ্রাণ পাচ্ছেন না মনে হচ্ছে তাদের উচিত হবে জরুরি ভাবে পরিবারের লোকজন হতে দুরত্ব বজায় রাখা এবং যত দ্রুত সম্ভব কোভিড-১৯ নির্দিষ্ট হটলাইনে যোগাযোগ করা। সরকার এবং মিডিয়ার উচিত হবে সাধারণ জনগনকে এ ব্যাপারে সবোর্চ্চ সচেতন করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেয়া।
২. হোম কোয়ারান্টাইন/আইসোলেশন যথাযথ গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে। লকডাউন এরিয়াগুলোতে প্রয়োজন সবোর্চ্চ সতর্কতা, প্রয়োজন সবস্তরের সমন্বয়তা।
৩. সম্ভাব্য প্রত্যেক ব্যাক্তির স্যাম্পল কালেকশন করে কোভিড-১৯ টেস্টের আওতায় আনতে হবে দ্রুততম সময়ে।
৪. পজিটিভ ব্যক্তির সাথে বিগত ৪৮ ঘন্টায় সামাজিকভাবে মিলিত ব্যক্তির প্রত্যেককে টেস্টের আওতায় আনতে হবে।
পজিটিভ ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে।
৫.আমাদের এখন প্রয়োজন কমপক্ষে ১ কোটি কোভিভ-১৯ সনাক্তকরণ কিটস। এর কোন বিকল্প নেই। সরকারী সংগ্রহের পাশাপাশি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও উৎসাহিত করা উচিৎ যেন সামান্য লাভের বিনিময়ে হলেও তারা টেস্ট কিট প্রোকিউর/সংগ্রহ করতে এবং সঠিক ভাবে টেস্ট নিশ্চিত করতে পারে।
৬. সরকারি নির্দেশনায় তরুণ চিকিৎসক, মেডিক্যাল স্টুডেন্ট, নার্স, সোশ্যাল একটিভিস্ট এবং প্রয়োজনে সেচ্ছাসেবীদের অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী ‘নজরদারি দল’ গঠন করতে হবে যারা একদম মাঠ পর্যায়ে (অন্তত ইউনিয়ন পর্যায়ে) সার্বিকভাবে কাজ করবে।
৭. উক্ত কাজের সাথে জড়িতদের অনলাইন ব্রিফিং এবং ট্রেইনিং এর পাশাপাশি তাদের সার্বিক সুরক্ষা, যাতায়াত ভাতা এবং ঝুঁকি ভাতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে সরকারি পর্যায়ে।
নজরদারি টিম টি নিম্নরূপ কাজ করতে পারেঃ
-সাসপেক্টেড সকল ব্যক্তি এবং তাদের সংস্পর্শে আসা (অন্তত বিগত ৪৮ ঘন্টায়) প্রতিটি ব্যক্তি হতে স্যাম্পল কালেকশন করবে
-প্রয়োজনে নিকটস্থ কালেকশন সেন্টারে ব্যক্তিকে পাঠানোর ব্যাবস্থা করবে
-ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি সনাক্তকরণ
-আক্রান্ত/সাসপেক্টেড ব্যক্তির শারীরিক তথ্যের নজরদারি
-একইসাথে দুর্গম এরিয়াগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রান সরবরাহ এবং সুষ্ঠু বন্টনেও দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৮. সরকারি ব্যাবস্থাপনায় উপরোক্ত কাজের সাথে জড়িত সকল ডাক্তার এবং সেবাকর্মীদের সকলকে অন্তত দুই সেট করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুয়েপমেন্ট) নিশ্চিত করতে হবে।
৯. প্রতিটি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি/সাসপেক্টেড/ ঝুঁকিপূর্ন আউটডোর সেবার সাথে জড়িত সকল ডাক্তার এবং সেবাকর্মীদের সকলকে অন্তত দুই সেট করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুয়েপমেন্ট) নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সকল সরকারি এবং বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানে পিপিই এর সঠিক নিয়ম মেনে জীবানু মুক্তকরণ (পুনর্ব্যাবহার্য ক্ষেত্রে) ব্যাবস্থা থাকতে হবে।
১১. জেলা পর্যায়ে আলাদা কোভিড-১৯ হাসপাতাল থাকতে হবে
১২. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) গাইডলাইন অনুযায়ী জীবাণু সংক্রমণ এড়াতে সকল প্রটোকল সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে দৃশ্যমান থাকতে হবে এবং প্রত্যেককে গুরুত্ব সহকারে মেনে চলতে হবে।
১৩. জড়িত সকল স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন প্রদান করতে হবে।
বিশেষ বিবেচনায় যাদের প্রয়োজন তাদের নিউমোকোক্কাল ভ্যাক্সিন প্রদান করতে হবে।
১৪. দেশের সকল বিদ্যমান আইসিইউ সমূহ সেবার জন্য সম্পূর্ণভাবে (লোকবল এবং ইকুয়েপমেন্ট) জোরদার এবং নিশ্চিত করতে হবে
১৫. মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাজে লাগাতে হবেঃ
-টেলিমেডিসিন সেবা জোরদারকরণ
-ক্লিনিক্যাল সেশন এবং তথ্য ভিত্তিক প্রচারকরণ
-অনলাইন মিটিং
– এবং অনলাইন ট্রেইনিং এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে খুব সহজেই
সর্বোপরি বলতে চাই, আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান হতে আরও এগিয়ে আসতে হবে এই দুর্যোগ মোকাবেলায়।
মহামারীতে (ভাইরাস আক্রমনে না হলেও হয়তো খাদ্যের অভাবে সেটা হতে পারে খুব সহজেই) পরিনত হওয়ার আগেই আক্রান্তদের সুচিকিৎসা এবং সুস্থদের কাছে সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অর্থনৈতিকভাবে এই মুহূর্তে যদি সেটা করতে আমরা ব্যার্থ হই, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেখতে হতে পারে প্রিয়মুখদের লাশের সারি.. দেখতে হতে পারে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ কিংবা ভয়াবহ অর্থনৈতিক ধ্বস! আর সেই ক্ষতিপূরণ করে উঠার ক্ষমতাটাও হয়তো আমরা তখন হারিয়ে ফেলবো চিরতরে!!
(অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক
ডিপার্টমেন্ট অব রিউম্যাটোলজি।
প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অফ মেডিসিন, BSMMU.
অনুবাদকঃ ডা. সাদিয়া শামরিন হৃদি