সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপক তিনি।গত ৫এপ্রিল তার করোনা সনাক্ত হওয়া পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন।শুরুতেই তিনি বাসায় আইসোলেশনে থাকেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ৭এপ্রিল সিলেটের করোনা সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেখানেও ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় তার ভেন্টিলেশন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে।কিন্তু ঐ হাসপাতালে ভেন্টিলেশন না থাকায় অবস্থা আরোও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ওসমানী হাসপাতালেরও আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন সার্পোট দেয়া হয় নাই তাকে।তিনি নিজের কর্মস্থলের এমন আচরণ হয়তো কখনোই প্রত্যাশা করেন নাই।করোনার কারনে হয়তো ওসমানী হাসপাতালে রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো কিন্তু তার অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টাতো করা যেতো।যাইহোক,তাকে ঢাকা পাঠানো ছাড়া যখন বিকল্প নাই তখনই ঘটে কালক্ষেপণ!তিনি এয়ার এম্বুলেন্স চাইলেন; কিন্তু সেটা দেয়া হয় নাই।চেষ্টা করেছিলেন সরকারি আইসিইউ এম্বুলেন্স সেটাও হয় নাই।তিনি যেহেতু নিজেই ডাক্তার হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে তার অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে।অবশেষে, প্রাইভেট আইসিইউ এম্বুলেন্স করে পৌঁছান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।ঐ সময়ে তার অসহায় মুখের কথা কল্পনা করলে কিছু করতে না পারার লজ্জায় যে কারো মাথা নিচু হয়ে যাবে।ইতিমধ্যে ফেসবুকের একদল অতি সচেতন মহল তার ছবি,মোবাইল নম্বর,ভিজিটিং কার্ড, বাসার নম্বর প্রভৃতি প্রচার করে ভাইরাল করে দিলো তার পরিবারকে।কেউ ভাবলো না এমন সময় তার বা তার পরিবারের মানসিক অবস্থা কেমন।সে একজন নামকরা ডাক্তার হিসেবে তার পরিবারকে নিশ্চয় শিখিয়েছেন যে কিভাবে কেউ আক্রান্ত হলে আইসোলেশনে থেকে অন্যদের নিরাপদে রাখতে হয়।তাছাড়া,পরিবার বা মহল্লা লক ডাউন করার জন্য তো প্রশাসন ছিলা।এভাবেই অবহেলা আর অসহায়ত্ব নিয়ে তিনি করোনার কাছে হেরে গেলেন।১৫এপ্রিল ভোর রাতে যখন তিনি মৃৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তখন তিনি নিশ্চয় তার চোখের সামনে দুই নিষ্পাপ সন্তানের চেহারা ভেসে উঠেছিলো;নাকি তিনি নিষ্ঠুর অভিমানে বাকরোধ্য ছিলেন? আমি জানিনা।তিনি হয়তো এটাও জেনে গেলেন বাংলাদেশের যে ৫০জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে তিনি একমাত্র ডাক্তার।
কবি গুরু জীবিত ও মৃত গল্পে বলেছিলেন, ”কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই”। ডা: মঈন উদ্দিন যেনো মরে প্রামাণ করলেন সিলেটে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি নাই।এটা একটা ম্যাসেজ, ভীত হওয়ার বার্তা।একজন সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব এই যে তাদের কি হবে?একজন ডাক্তারের যদি এমন পদে পদে হয়রানী আর নাজেহাল হতে হয় তাহলে পুরা সিলেটের নিরাপত্তা কতটুকু? আজকে একজন ডাক্তার মারা গেলেন কালকে হয়তো আমি আপনি সিরিয়ালে। আমরা কি বেঁচে থাকার চেষ্টাটুকু করতে পারবো না?
ঢাকায় বিপুল পরিমাণে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, আইসোলেশন সেন্টার হচ্ছে, আইসিইউ,ভেন্টিলেটর,পিপিই নিয়ে কাজ হচ্ছে।কিন্তু এখনো সিলেটে কোন কার্যকর আইসোলেশন সেন্টার নাই,ইমাজেন্সি সেবার জন্য আইসিইউ,ভেন্টিলেটর নাই।ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগ বা জেলার হয়তো একই অবস্থা।কিন্তু এভাবে কি করোনা মোকাবিলায় অমরা সফল হবো? এ যেনো মৃত্যুর জন্য আয়োজন করে অপেক্ষা করা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ডা: মঈন উদ্দিন এর পরিবারের দ্বায়িত্ব নিয়েছেন এটা আপনার মানবিক গুণাবলী একটা।আপনি দয়াকরে সিলেটের দিকে নজর দিন।সিলেটের এই অসহায়ত্ব আর হাহাকার আপনার কাছে কেন প্রকাশ করছেনা কেই সেটা আমার বোধগম্য নয়।আপনি তো প্রতিটি জেলার সাথে ডিডিও কনফারেন্স এ কথা বলেছেন,তারা আপনাকে কেন সঠিক তথ্য দিচ্ছেনা সেটা খুবই হতাশাজনক।নাকি তারা মৃত্যুর মিছির না বাড়লে সেটা প্রকাশযোগ্য মনে করেনা!
##
মোহাম্মদ সেলিম মিয়া
প্রভাষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট