হাওর ডেস্ক ::
করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মধ্যেও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে চলছে অনিয়ম। বেশ কয়েকজন ত্রাণের চাল আত্মসাৎকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অবস্থায় দেশজুড়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে দ্রুততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে এবার প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘কিউআর কার্ড’ ব্যবহার করে উপকারভোগীদের একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি করা হবে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের মধ্যে আজ রবিবার এক অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার সরকারি বাসভবন থেকে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সচিবালয় থেকে অনলাইন বৈঠকে যোগ দেন।
এ ছাড়া আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিধপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা অনলাইনে বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয় ও দ্রুত করতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সে বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত কি সহযোগিতা প্রয়োজন সে বিষযয়ে আইসিটি বিভাগ হতে জানতে চাওয়া হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় করতে সরকারি এবং বেসরকারি ও স্বোচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া এবং এই কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজ তৈরি করা প্রয়োজন। এ ছাড়া জাতীয় তথ্য সেবা হেল্পলাইন ৩৩৩ এর সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংযোগ স্থাপন করা প্রয়োজন।
আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটুআই প্রেগামেরও আওতায় সারা দেশে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপকারভোগীদের একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজ তৈরির জন্য একটি সফটওয়ার তৈরি করবে। উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়ত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং মোবাইল নাম্বার ব্যবহারের মাধ্যমে একটি নির্ভুল ডেটাবেইজ তৈরি এবং ত্রাণ বিতরণকার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানানো হয়। উপকারভোগীদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যেক উপকারভেীগর একটি ছজ কার্ড তৈরি করা হবে। মাঠ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপকারভোগীদে তালিকা অনুযায়ী ‘কিউআর কার্ড’ প্রিন্ট করে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
ত্রাণ বিতরনের সময় বিতরণকারী এই ছজ কার্ড তার মোবাইল ফোনের অ্যাপস এর মাধ্যমে স্ক্যান করবেন। ফলে উপকারভোগীর তথ্য কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজে হালনাগাদ হয়ে যাবে এবং সকল ধরণের দ্বৈততা ও অনিয়ম পরিহার করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ডেটাবেইজটি তৈরি হলে সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় আরো জোরদার হবে বলে সবাই মত প্রকাশ করেন।
সভায় জানানো হয়, প্রানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কেউ যেন খাদ্যসংকটে না ভোগে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারি সেবা সম্পর্কিত হেল্পলাইন ৩৩৩ এর মাধ্যমে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার আবেদন গ্রহণ করা হবে এবং সেই আবেদন তালিকা যথাযথ যাচাই-বাছাই করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই দুর্যোগকালীন সময়ে জনগণের বৃহত্তর কল্যাণার্থে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কাজ করবে এবং প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দেবে। এ ছাড়া এই সময়ে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য/সবজি ত্রাণহিসেবে বিতরণের জন্য এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পরিবহন ও বিতরণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটুআইয়ের একশপ প্লাটফরম ব্যবহারের জন্য তিনি দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এ ছাড়া আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি ও উপকারভোগীদের ডেটাবেইজ তৈরির করার কাজ শুরুর জন্য উভয় মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।