বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বেশিরভাগ ধানই এখন পাকা। বাউরি হাওয়ায় দোলছে একমাত্রা বোরো ফসল। জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে আরো দুই তৃথিয়াংশ উদ্ধৃত্ত থাকে হাওরের ধান। তাই এই খাদ্য ভা-ারের ফসল করোনাকালে আসন্ন খাদ্যসংকটের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একাধিক ভিডিও কনফারেন্সে যে কোন মূল্যেই হাওরের ফসল কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসনকে। দলীয় নেতাকর্মী, শ্রমজীবী, অন্যান্য পেশাজীবীসহ হাওরাঞ্চলের ও বাইরের শ্রমিকদের ধানকাটায় যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে একসময় হাওরে ধান কাটতে আসা উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় এবার হাওরে নিয়ে আসা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে গাড়িতে করে নিয়ে এসে তাদেরকে স্থানীয়ভাবে শারিরিক তাপমাত্রা মেপে হাওরাঞ্চলের স্কুলে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই হাওরের ধান বন্যার মুখে পড়ার আগে কেটে তুলতে সর্বাতœক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাছাড়া গত তিনদিন ধরে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন জেলার বিভিন্ন হাওরে ঘুরে ধানকাটা তদারকিসহ কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন। স্থানীয় মসজিদগুলো থেকেও স্থানীয় শ্রমিকদের মাইকিং প্রচারণার মাধ্যমে ধান কাটার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এরপরও হাওরে শ্রমিক সংকট রয়ে গেছে বলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও কৃষকরা জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে গত এক সপ্তাহ ধরে হাওরে বিআর ২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহেই বিআর ২৯ সহ অন্যান্য ধান পাকবে। এক সপ্তাহ আগ থেকেই সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, সিলেট, গাইবান্দাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে (গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত) ৮ হাজার ৯৭৫ জন কৃষক ধান কাটতে সুনামগঞ্জে প্রবেশ করেছেন। তাছাড়া স্থানীয় শ্রমিকসহ, স্বেচ্ছাসেবীরাও হাওরে ধান কাটছেন। সরকারি ভর্তুকিকৃত ৯২টি কম্বাইন হার্ভেস্টর ও ১২৮টি রিপার মেশিন দিয়েও হাওর এলাকার উঁচু এলাকার জমির ধান কাটা হচ্ছে। এই মেশিনে নিছু এলাকার জমির ধান কাটা যায়না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে এ পর্যন্ত ধর্মপাশা উপজেলায় ২ হাজার ৬৫০জন শ্রমিক, শাল্লায় ৭৫০জন, দিরাইয়ে ৩ হাজার ১২০জন, জামালগঞ্জে ১ হাজার ২০০ জন এবং জগন্নাথপুরে ১ হাজার ২৫৫জন শ্রমিক এসে ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে এখনো সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার এবং ছাতক উপজেলায় বাইরের কোন শ্রমিক আসেনি। এই উপজেলা গুলোতে স্থানীয় শ্রমিক এবং স্বেচ্ছাসেবীরাই এখন পর্যন্ত ধান কাটছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ নেতৃবৃন্দকেও বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটতে দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন বাইরের শ্রমিকদের তাপমাত্রা মেপে কাজে যোগদান করানো হচ্ছে। তাছাড়া তারা যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে ধান কাটেন এবং অবস্থান করেন এ জন্য স্কুল গুলোও খুলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী ২৬ এপ্রিলের পর বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা জরুরি সভা করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই হাওরের সম্পূর্ণ ধান কেটে তুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষ্যে শ্রমিক নিয়ে আসা, স্থানীয় শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে মাঠে নামানো, স্বেচ্ছাসেবীদের মাঠে নামানোসহ জেলার পেশাজীবী ও শ্রমজীবীদের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।