নতুন করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত আমেরিকায় প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নিউইয়র্ক। আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নগরীর মানুষের। জীবন বাঁচাতে কাজ করছেন চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিউইয়র্ক পুলিশ (এনওয়াইপিডি) ও দমকল বিভাগের (এফডিএনওয়াই) কর্মীরাও রয়েছেন এ যুদ্ধের সম্মুখ সারিতে। নিউইয়র্কের মানুষের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশিরাও, যাদের মধ্যে একজন নিয়ন চৌধুরী।
এনওয়াইপিডির সাদা পোশাকের কর্মকর্তা নিয়ন চৌধুরী গ্রোসারি থেকে ওষুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহের পাশাপাশি যেকোনো ধরনের সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন মানুষের। তাঁর এই কার্যক্রম এরই মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
নিয়ন চৌধুরী সুনামগঞ্জের সন্তান। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি কলেজের রসায়নের অধ্যাপক। ২০০১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। নিয়ন চৌধুরীর দুই সন্তান। বড় ছেলে সেভেন গ্রেডে পড়ে। আর মেয়ে পড়ে ফিফথ গ্রেডে। ২০১২ সালে তিনি এনওয়াইপিডিতে যোগ দেন। বর্তমানে ব্রঙ্কস ট্রানজিট ক্রাইম ব্রাঞ্চে সাদা পোশাকে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত। স্ত্রী চম্পা চৌধুরী সিলেটের মেয়ে।
নিজের কার্যক্রম সম্পর্কে নিয়ন চৌধুরী বলেন, ‘আমার প্লাম্বার ব্রঙ্কসে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। তাঁর বাড়িতে সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। খাবার নেই। আমি তাঁকে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করি। তাঁর ভবনের সামনে পার্কিংয়ে গ্রোসারিগুলো দিয়ে ডাকলাম। তখন আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছিলাম। তিনি যখন তাঁর শপিং কার্ট নিয়ে এলেন, আমার চিনতে কষ্ট হলো। তাঁর ওজন কমেছে; আগের চেয়ে শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছেন। এতটাই দুর্বল যে, তিনি সাহায্য ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছিলেন না। আমার আনা গ্রোসারিগুলো সংগ্রহ করতে বাড়ির বাইরে এসে তিনি কৃতজ্ঞতা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। আমরা হাত ইশারা করে বিদায় নিলাম।’
মার্চের শুরু থেকে নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়াতে থাকে। এ নগরী হিমশিম খেতে থাকে সমস্যা মোকাবিলায়। সাধারণত সপ্তাহে চল্লিশ ঘণ্টা কাজ করলেও বর্তমানে দিনে দশ-বারো ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। নিউইয়র্ক পুলিশের বহু সদস্য করোনা টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার পর সেলফ কোয়ারেন্টিনে চলে যান। বর্তমানে প্রায় ছয় শ কর্মকর্তা কাজে ফিরে এসেছেন সুস্থ হয়ে। নিয়ন চৌধুরী কমিউনিটির সবাইকে মনোবল বজায় রাখতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
(সৌজন্যে প্রথম আলো)