হাওর ডেস্ক ::
বাংলাদেশে মানুষের আয়ে বা ক্রয়ক্ষমতার ২০ শতাংশে করোনা আঘাত করলে নতুন করে দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র ও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসবে। আর আঘাতের মাত্রা যদি ৫ শতাংশও হয়, সে ক্ষেত্রে ৪০ লাখ মানুষ তাদের আগের অবস্থান থেকে ছিটকে পড়বে।
এসব মানুষ চলে আসবে হতদরিদ্র ও দরিদ্রের তালিকায়। এতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
করোনার মহামারীতে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বব্যাপী নতুন করে কতজন গরিব হবে-এর একটি হিসাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ‘ইস্টিমেটস অব দি ইমপেক্ট অব কোভিড-১৯ অন গ্লোবাল প্রভার্টি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে নতুন ফমুলা ব্যবহার করে এ হিসাব বের করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, হতদরিদ্র ও দরিদ্রের হার সবচেয়ে বেশি হবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায়। তবে করোনাভাইরাস প্রত্যেক দেশে ২০ শতাংশ আয়-রোজগার ও ক্রয়ক্ষমতায় আঘাত হানলে বিশ্বব্যাপী ৪২-৫৮ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসবে।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন শনিবার বলেন, করোনার কারণে গরিব মানুষের ঝুঁকি দু’দিকে। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যারা কাজ করছে, তাদের কাজ বন্ধ। ফলে আয় কমেছে। অপরদিকে নিত্যপণ্য ও মেডিকেল সেবা মূল্য বৃদ্ধির কারণেও তাদের ওপর আঘাত আসছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থা গবেষণা বলেছে, ৩৫ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র হয়েছে। ফলে এর সঙ্গে আগে ১৫ শতাংশ হতদরিদ্র যোগ করলে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এই করোনায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র হয়েছে। তবে এটি অনুমাননির্ভর। তিনি আরও বলেন, এখনও সামনের দিনগুলো নিয়ে অনিশ্চিত। অর্থনীতি কবে সচল হবে কেউ যানে না। এটি দীর্ঘ হলে এর সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ আঘাতে দারিদ্র্যের ওপর স্বল্পসময়ের আঘাতের একটি হিসাব বের করা হয়েছে। এ হিসাবটি করা হয়েছে তিন শ্রেণির আয়ের ওপর। হিসাবে আনা হয়েছে প্রথম যাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলার (১৬১ টাকা), দ্বিতীয় যাদের দৈনিক আয় ৩ দশমিক ২০ ডলার (২৭২ টাকা) এবং সর্বশেষ দৈনিক আয় ৫ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার (৪৭৬ টাকা)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা কোনো দেশের মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতায় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ আঘাত করলে যাদের আয় দৈনিক প্রায় ২ ডলারের নিচে তাদের মোট হার নতুন করে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ৩ দশমিক ২ ডলারের নিচে আয়ের মোট জনসংখ্যার হার নতুন করে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে দৈনিক ২ ডলারের নিচে আয় করছে এমন জনগোষ্ঠী হচ্ছে ২ কোটি ৩৭ লাখ বা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এরা হতদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু করোনার ২০ শতাংশ মানুষের আয়-রোজগার বা ক্রয়ক্ষমতায় আঘাত হতদরিদ্রের হার আরও ৬ শতাংশ বাড়াবে।
অর্থাৎ নতুন করে আরও ৯৬ লাখ মানুষ হতদরিদ্রের তালিকায় যুক্ত হবে। সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশে ১ দশমিক ৯০ ডলারের ওপর বা ৩ দশমিক ৮ ডলারের নিচে দৈনিক আয় করছে এমন মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৮০ লাখ (৫৫ শতাংশ)। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বলা হয়েছে, ২০ শতাংশ আয়ে আঘাত করলে এই হার ৫৫ থেকে বেড়ে ৬২ শতাংশে উঠবে। অর্থাৎ ৭ শতাংশ বাড়বে।
ওই হিসাবে নতুন করে দরিদ্র হবে আরও ১ কোটি ১২ লাখ লোক। ফলে করোনার প্রতিঘাতে নতুন করে মোট ২ কোটি ৮ লাখ মানুষ দরিদ্র ও হতদরিদ্রের তালিকায় নাম লেখাবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি ২০ শতাংশ না হয়ে মাত্র ৫ শতাংশও আঘাত করে ততে হতদরিদ্র (১.৯০ ডলার) ১ শতাংশ এবং দরিদ্র (৩.২০ ডলার) ১ দশমিক ৫২ শতাংশ বাড়বে। ওই হিসাবে বাংলাদেশে হতদরিদ্র ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা নতুন করে ৪০ লাখ হবে।
এর মধ্যে ১৬ লাখ হতদরিদ্র হবে এবং দরিদ্র বনে যাবে ২৪ লাখ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ হবে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে পৌনে দুই কোটি মানুষ আছে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছে। এসব মানুষ কাজ হারিয়ে তাদের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে।
পরিবহন শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, মুদি দোকানি, কুলি, মজুর দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করছে। তারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে অন্যান্য দেশের পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মোট জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ আয়ে করোনাভাইরাস আঘাত করলে বিপরীতে নতুন করে সাড়ে ৮ কোটি থেকে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ হতদরিদ্র হবে। যদি এটি ১০ শতাংশ আঘাত করে সে ক্ষেত্রে নতুন ১৮ কোটি থেকে ২৮ কোটি মানুষ হতদরিদ্র হবে।