হাওর ডেস্ক ::
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্কুল চালু করা না গেলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক একটি মূল্যায়ন করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্বাভাবিক হিসেবে বছরে তিনবার (প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক) পরীক্ষা নেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। করোনার ছুটি দীর্ঘায়িত হলে এ পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে না।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে স্কুল বন্ধের সময়ে পাঠদানের বিকল্প হিসেবে সংসদ টেলিভিশনে ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কমিনিউটি রেডিওতে ক্লাস এবং মোবাইল ফোনভিত্তিক পাঠদান শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যেও কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আমাদের কাছে আমাদের সন্তানরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোনোভাবেই তাদের ঝুঁকির মধ্যে আনব না। পরিস্থিতি যদি ভালো না হয়, তাদের স্কুলে না আনতে পারি, তা হলে আমরা ভার্চুয়াল ক্লাসগুলো চালিয়ে যাব। এখন তো আমরা ভার্চুয়াল মিটিং করে অফিস করছি। আমাদের কাজকর্ম তো বন্ধ নেই।
পরীক্ষা বা শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে সচিব বলেন, পরীক্ষা পরের বিষয়, আগে তাদের লেখাপড়ার দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। আমরা তো পরীক্ষাকেন্দ্রিক লেখাপড়া থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছি। আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে। এ বছর ১০০টি স্কুলে পাইলটিং করা হচ্ছে এ পদ্ধতি। আগামী বছর শতভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সুতরাং পরীক্ষা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য হচ্ছে শিশুদের কতটা শেখাতে পারলাম।
তিনি আরও বলেন, করোনার ছুটিতে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষতি নিরূপণ এবং উত্তরণের কৌশল চূড়ান্ত করেছি। আমাদের হিসাবে কোভিড ১৯-এর কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭ দিন বন্ধ ছিল। এ বন্ধের কারণে ক্লাস করা যায়নি প্রথম শ্রেণির দৈনিক চারটি করে ১৭ দিনে ৬৮টি। দ্বিতীয় শ্রেণিতেও ৬৮টি ক্লাস। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১০০টি করে ক্লাস হয়নি। মোট ৪৩৬টি ক্লাস ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটাতে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কীভাবে এসব ক্লাস নেব সে পরিকল্পনাও করেছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারের ছুটি অনুযায়ী ৬ জুন পর্যন্ত রোজা, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি। এর মধ্যে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ছুটি বাতিল করে ক্লাসে ফিরে যাব।
সচিব বলেন, সেপ্টেম্বরের আগে যদি শিশুদের ক্লাসে না আনতে পারি, তা হলে একটা অ্যাসেসমেন্ট করব। এখন তো বছরে তিনটি অ্যাসেসমেন্ট করি। সাময়িক অ্যাসেসমেন্ট তিনটির পরিবর্তে ফাইনাল একটি অ্যাসেসমেন্ট করব, কোনো সমস্যা নেই।
সচিব আরও জানান, বন্ধে বাদ যাওয়া ক্লাসগুলো নেওয়ার জন্য পরিস্থিতি যদি ভালো হয়, ১ জুন স্কুল খুলে দেওয়া হবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হয়, এটি তৃতীয় সপ্তাহে নেওয়া হবে, তা হলে জুনের ৬ দিন ও ডিসেম্বরের ১০ দিন, মোট ১৬ দিনে বাদ যাওয়া ক্লাসগুলো সমন্বয় করা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, সংসদ টেলিভিশন একটি টেরেস্টিরিয়াল চ্যানেল। একটি জরিপ মতে, আমাদের ৬০.৬ শতাংশ পরিবারে টেলিভিশন সুবিধা আছে। এর বাইরে যারা আছে তাদের কাছে কীভাবে রেডিও এবং মোবাই ফোনের মাধ্যমে পৌঁছনো যায় সেটি নিয়েও আমরা কাজ করছি। আগামী সপ্তাহে এটি চূড়ান্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মায়েরা স্কুল শিক্ষকদের যোগাযোগের মধ্যেই আছেন। সবার ফোন নম্বর প্রতিটি বিদ্যালয়ে আছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি। মাঠপর্যায় থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে।