রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু ::
ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আছদ্দর আলী চৌধুরী ছিলেন সুনামগঞ্জের আদর্শ রাজনীতির পথিকৃৎ। একজন নির্লোভ, সৎ ও প্রতিকৃত। দেশপ্রেমিক নেতা জেলার ছাতক উপজেলার ছৈলা গ্রামে ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জ জুবিলী স্কুলে লেখাপড়া শেষে ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেট্রকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে সিলেট এমসি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। এমসি কলেজে পড়া অবস্থায় বৃটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তখন তিনি সিলেটকে পূর্ব বঙ্গের সাথে যুক্ত রাখার আন্দোলনে শরিক হন।
১৯৫১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করে সুনামগঞ্জের আদালতে মোক্তারী পেশায় যোগদান করেন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষাবিদ চাচা মুসলিম চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এই দাবিতে প্রতিদিন রাজপথের মিছিলে অগ্রভাগে থাকতেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন থেকে শুরু করে আয়ূববিরোধী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। ১৯৬৪ সালে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি সুনামগঞ্জ পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ছয় দফা কি এবং কেন শিরোনামে একটি বই লিখেন। (সূত্র : চৌধুরী মোহাম্মদ আবু তারেক, মরহুমের ২য় ছেলে।) ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন এবং ’৭০ -এর নির্বাচনে বলিষ্ট ভ‚মিকা পালন করেন। একাত্তরের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের ভাষণের পর সুনামগঞ্জেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জ্বীবিত হন। ২৬ শে মার্চের পর সুনামগঞ্জেও গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। মরহুম আছদ্দর আলী চৌধুরী উক্ত পরিষদের অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চলে যান বালাটে। প্রথমে বালাট আনসার শরণার্থীদের সেবার দায়িত্ব বর্তায় তাঁর উপর। এক পর্যায়ে বালাটের লালপানি শরণার্থী শিবিরে রিলিফ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় আছদ্দর আলী চৌধুরী মোক্তার সাবকে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জ শহরের জামাইপাড়ার বাসাটি স্থানীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় পাক বাহিনী জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়কার করে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রতিবেশী জীবন রায়ের বাসায় সাময়িকভাবে বসবাস করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর পর মহকুমা রেডক্রসের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করলে তিনি সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট উনাকে গ্রেফতার করা হয়। ৩ মাস আটক থাকার পর ১৯৭৫ সালের ২১ শে নভেম্বর মুক্তি লাভ করেন। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে তিনি মহকুমা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।