ঢাকা: বাংলাদেশের এক কৃতি ক্রিকেটারের নাম রকিবুল হাসান। সাবেক এই ক্রিকেটার বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে ৬৩ বছর বয়সী রকিবুল হাসানের। এ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়ে প্রথম রোজা রাখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। কৌশরের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে সেহরি, ইফতার ও তখনকার ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট। আলাপচারিতায় ছিলেন বাংলানিউজের স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট সাজ্জাদ খান। সেই আলাপচারিতার চুম্বুকাংশ পাঠকের জন্য-
রকিবুল হাসানের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে। ছোটবেলায় তার আব্বা-আম্মা নাকি রোজা রাখতে দিতে চাইতেন না। তৃতীয় শ্রেণিতের পড়া অবস্থায় অনেক জোরাজুরি করে রেখে ফেলেন জীবনের প্রথম রোজাটি। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটা মনে পড়ে… ছোটবেলায় আব্বা কেন জানি না রোজা রাখতে দিতে চাইতেন না। বলতেন, তোমরা বেশি ছোট। ভোর রাতে দেখতাম সেহরিতে কলা দিয়ে দুধ ভাত খাওয়া হচ্ছে। সেহরি খেতে খুব লোভ হতো। রোজার কতটা সওয়াব কিংবা মর্তবা সেটা তখন বুঝতাম না। তখন বুঝতাম রোজা এলে বাড়তি খাবার খাওয়া যায়। রোজা মানেই বাড়তি খাবারের আয়োজন। চার ভাই, চার বোনের বড় পরিবার ছিল আমাদের। খুব ভালো খাবার খাওয়ার সৌভাগ্যও ছিলো না তখন। মনে আছে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় অনেক জোরাজুরি করে প্রথম রোজাটা রাখি। রোজা রাখার অবজেকটিভ ছিল, ভালো ভালো খেতে পারবো। যেহেতু আমি রোজাদার আমার জন্য স্পেশাল একটা খানা থাকবে।’
সেহরির মতো ইফতারের খাবারের আয়োজন নিয়েও আলাদা আগ্রহ ছিল রকিবুলের, ‘ইফতারে মা ঘরেই বানাতেন বাইরে থেকেও মাঝে মাঝে আনতেন। নরম খিচুড়ি হতো, পিয়াজু করতেন। কাঁচা ছোলা সবসময়ই থাকতো। মুড়ি তো থাকতোই। মিষ্টি জাতীয় একটা কিছু থাকতো। আটা দিয়ে রুটির মতো একটা পিঠা বানাতেন আম্মা। দেশি ভাষায় আমরা ওটাকে বলি ধাপড়া। ওই ধাপড়া খাওয়া এখন ভীষণ মিস করি।’
ছোটবেলায় মাগরিবের আজানের ১০ মিনিট আগেই ইফতার সাজিয়ে ভাই-বোনদের সঙ্গে খাবারের সামনে বসে থাকতেন রকিবুল। সে স্মৃতি মনে করে এখনও আবেগ ভর করে তার, ‘কখন আজান হবে-এই অপেক্ষাটা মধুর ছিল। আজানের ১০ মিনিট আগেই ইফতার রেডি করে বসে থাকতাম। শেষের দিকের সময় তো আর কাটতে চাইতো না। তখন আমার এক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মেঝেতে পাটি, চাদর বিছিয়ে গোল হয়ে ইফতার করতে ভাই-বোনদের নিয়ে বসতাম।’
পুরনো ঢাকায় শৈশব কাটায় সেখানকার ইফতারের ঐতিহ্য ভালো জানা রকিবুলের, ‘পুরনো ঢাকার সেই ইফতারের কথা আজও মনে পড়ে, ‘পুরনো ঢাকার ইফতারের সঙ্গে একটা ধর্মীয় ব্যাপার ছিল। থেকে এটা আমাদের ঘরে আসতো। চকবাজারের ইফতার সাংঘাতিক পূজনীয় একটা ব্যাপার তখন। বিভিন্ন ধরণের কাবাবগুলো অসাধারণ ছিল। পাড়াপড়শীকে ইফতার দেওয়ারও একটা প্রচলন ছিল। তখন তো ওতো ফ্ল্যাট ছিলো না। এখন কিন্ত ফ্ল্যাটের কারণে ইফতার দেওয়া-নেওয়া বেশি হয়। আগে প্রত্যেকে আলাদা আলাদা বাড়িতে থাকতো। তো এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি দিতে গেলে অনেক সময় লেগে যেত।’
ষাটের দশকে রাজধানীতে এত মানুষ ছিলো না। রাস্তাঘাটে যানযটের ব্যাপারও ছিলো না। ইফতারির সময় ঘনিয়ে এলে নীরবতা নেমে আসতো চারিদিকে। ইফতারের আগে রাস্তার যানযট, মানুষের ঘরে ফেরার যুদ্ধ দেখে ‘আহত’ হন রকিবুল, ‘তখন দেশের মোট জনসংখ্যা কতো হবে, ৫-৬ কোটি। এত গাড়িও চলে না, এত মানুষও নাই। এখন খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি, মানুষ পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার জন্য দৌঁড়াচ্ছে!’