রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু ::
আছদ্দর আলী চৌধুরী মোক্তার সাব আমার প্রতিবেশী। উনার ৭ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তৃতীয় ছেলে দীপু আমার বন্ধু। ছোট বেলা প্রাইমারী স্কুল কালীবাড়িতে প্রায় একই সময় ভর্তি। হাটি হাটি পা পা করে আমাদের জামাইপাড়া শেষ করে কামারখালী ব্রিজ পেরিয়ে কালীবাড়ি স্কুলে যাওয়া। ব্রিজের নীচ দিয়ে তখন নৌকা চলে আসতো আমাদের বাসার সামনে। দীপুদের বাসার পাশ দিয়ে খাল বয়ে যাওয়ায় সারি সারি নৌকা বাঁধা থাকতো। বাঁশঝাড়ের পাশে নৌকা দিয়ে রিলিফের মাল চলে আসতো। জীবন রায়ের বাসার সম্মুখে মোক্তার সাব কার্ড দিয়ে রিলিফের জিনিষ-পত্র দিতেন। হত দরিদ্র মানুষের মাঝে রিলিফ বিতরণ শেষে শূন্য হাতে ঘরে ফিরলে অবাক দৃষ্টিতে পরিবারের সবাই তাকিয়ে থাকতেন। সম্ভবত তিন বছর পর তিনি বিধ্বস্ত ঘর মেরামত করে নিজ গৃহে চলে যান। পরবর্তী প্রায় ৫ বছর জীবন রায়ের পরিত্যক্ত বাসাটি মোক্তার সাব নিজেই দেখবাল করতেন। প্রায় ২ একর জায়গার উপর বাসাটি মোক্তার সাব দেখভাল করায় কেউ দখল করতে পারেনি। যাই হোক দীপুদের বাসার পাশে কামারখালের পাশে প্রতিদিন অনেক নৌকা এসে নোঙ্গর করতো। মহকুমার তৃণমূলের বিচারপ্রার্থী লোকজন আমাদের পাড়াকে নিরাপদ মনে করতেন। যেহেতু একজন মোক্তার সাবের বাসা। তাই তারা রাত্রী যাপন করতেন স্বাচ্ছন্দে। তাছাড়া আমাদের জামাইপাড়া থেকে কাচারি খুব সন্নিকটে সকাল বেলা নৌকার মাঝিরা ভাত চরাতো। বাবুরা ভাত খেয়ে কাচারিতে যেতেন। মোক্তার সাবকে দেখতাম একটি বলাকা। সাইকেলে চষে কাচারিতে যেতেন। বর্ষায় কামারখালী খালে প্রচÐ ¯্রােত থাকায় আমি, দীপু, অপু দল বেঁধে স্কুলে যেতাম। সম্ভবতা ’৭৭-৭৮ সালের দিকে প্রতি বছর বন্যা হতো। আমাদের বাসাগুলো নীচু এলাকা হওয়ায় বর্ষার পানিতে প্রায় সবার বাসায় বুক পরিমাণ পানি হতো। প্রচুর পরিশ্রমি মোক্তার সাব সব ধরনের সব্জি চাষের পাশাপাশি ব্যাপক গাছ-গাছালি রোপণ করতেন সঙ্গে কলাগাছও। বর্ষার মওসুমে আমাদের সবাইকে কলাগাছ দিতেন। তা দিয়ে কলার ভেলা বানিয়ে ঘর থেকে রাস্তায় বেরুতাম। কমপক্ষে ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতো এ বন্যা। বন্যায় মাছ ধরেও সবার বাসায় পাঠাতেন। বর্ষা শেষ হলে আবার বাগান করা সব্জি চাষ করায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। ছুটির দিনে বিকেল বেলা বর্শি নিয়ে সাইকেলে চড়ে সুরমা নদীতে চলে যেতেন। আমরা তখন পাড়ার ছোট মাঠে খেলা করতাম। যেইমাত্র লাইট পোষ্টে বাতি জ্বলে উঠতো আমরা বাতি জ্বালার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে যেতাম। যদিও স্বপন ভাই পিনু দা ওরা খেলা করতো। কিন্তু মোক্তার সাবকে দেখা মাত্র সবাই যার যার ঘরে চলে যেতেন। শাসন ছিল কঠোর মোক্তার সাবের। ধীরে ধীরে আমরা যখন এসএসসি পরীক্ষা দিলাম তখন আমাদের বন্ধু তালিকায় যুক্ত হলেন রাহুল, সুদিপা সুকোমল, পিযুষ, নির্মল, তাপস, টুলু প্রমুখ। দীপুর আব্বা যখন দেখলেন আমরা সবাই মুজিবীয় আদর্শের সৈনিক তখন উনাকে বেশ উজ্জ্বীবিত দেখেছিলাম। রাজনীতি করতে আমাদেরকে কোনো নিষেধ করেননি। ছাত্র রাজনীতির প্রতি অবিচল আস্থা ছিল উনার। আছদ্দর আলী চৌধুরী মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তখনকাল সময়ের ছাত্র রাজনীনির খলিফা আয়ূব বখ্ত জগলুলকে প্রায়ই দেখতাম উনার চেম্বারে এসে দিক নির্দেশনা নিতে। এভাবেই কাছে থেকে দেখেছি একজন সাদা মনের মানুষকে।