বিশেষ প্রতিনিধি::
ষাটের দশকে নির্মিত সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সেতুগুলো গত কয়েক বছর আগেও ছিল ঝূকিপূর্ণ। লাইন ধরে ছোট্ট সেতু দিয়ে যানবাহন গুলো যাতায়াত করতো। একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে অতিক্রম করতে সময় লেগে যেতো অনেক্ষণ। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাহিরপুরের কৃষক সমাবেশে এই অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ উন্নয়নের ঘোষণা দেওয়ার পর উন্নয়নের মূল ¯্রােত থেকে ছিটকেপড়া প্রান্তিক জনপদ সুনামগঞ্জের পালকে উন্নয়নে হাওয়া বইতে শুরু করে।
প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কের ১৪টি সেতু নতুন করে নির্মাণ করায় এই সড়কে যাতায়াত সহজ হয়েছে। চলতি বছর এই সড়ক প্রশস্থ করতে একনেকে মোটা অংকের বাজেটও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক একটি আধুনিক সড়কে উন্নীত হবে বলে যোগাযোগ সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা জানান। তাছাড়া সুরমা নদীতে আব্দুজ জহুর সেতু নির্মাণ এবং কুশিয়ারা নদীতে শতকোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এই জেলার যোগাযোগ উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। আব্দুজ জহুর সেতু চালু হওয়ায় সুরমার উত্তরপাড়ের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সরাসরি জেলা শহরের সঙ্গে চারটি উপজেলার যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এতে জনগণের চিরদিনের দুর্ভোগ কমেছে। তাছাড়া দিরাই-শাল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে। ওই সড়কের মাটি ভরাটের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া বহুল কাঙ্খিত ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইন সম্প্রসারণ কাজও শিগ্রই শুরু হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে শিক্ষাক্ষেত্রেও এই জেলার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ জুন জেলার ১০টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। এর আগে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালু ও অনার্স কোর্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন সহজেই স্থানীয় শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে পারবে। গত বছর সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজও ডিগ্রিতে উন্নীত করা হয়েছে। মহিলা কলেজ ডিগ্রিতে উন্নীত হওয়ায় মেয়েদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হয়েছে। জানা গেছে আগে অনেকে অভিভাবক মেয়েদের আলাদা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ করে দিতেন। এতে নারীদের উচ্চশিক্ষার রুদ্ধ হয়ে যেতো। সর্বশেষ গতকাল বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয়েছে। এই খবরে বিশ্বম্ভর উপজেলাবাসী আনন্দিত। তাছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে জেলায় আরো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। মফস্বলের কলেজগুলো সরকারি হওয়ায় এলাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়নে এই সরকারের সময়ে মাইলফলক উন্নয়ন হয়েছে বলে সুধীজন মনে করছেন। জানা গেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অন্যতম পরিচালক হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুলক কবির ইমন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুৎ সাবস্টশন নির্মাণের অনুমোদন নিয়েছিলেন। ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন এই এই বিদ্যুৎ সাবস্টেশ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার জগন্নাথপুও দিরাইয়ে দুটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন চালু করায় ওই এলাকার মানুষ বিদ্যুৎ সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেণ সুনামগঞ্জ সাবস্টেশনের কাজ শেষ হলে এই জেলার বিদ্যুতের অবস্থা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ষাটের দশকে নির্মিত সঞ্চালন লাইন আর ব্যবহার করতে হবেনা। ফলে বিদ্যুৎভোগান্তি দূর হবে জেলাবাসীর।
স্বাস্থ্যখাতেও জেলার বিরাট উন্নয়ন হয়েছে বলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান। ২০১২ সনে স্বাস্থ্য উপদেষ্ঠা মোদাচ্ছের আলী ৯ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। এই হাসপাতালটি এখন নির্মাণের শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরই উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে।
জেলাবাসী এই মাইল ফলক উন্নয়নের জন্য ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রত, অ্যাডভোকেট শামছুন্নাহার রব্বানী শাহানা এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন এবং সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুলের বিরাট অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছে। এবং জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমানকেও এলাকার বিশেষ উন্নয়নের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এছাড়াও সুনামগঞ্জ কারাগার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ভবন নির্মাণকাজও এই সরকারের সময়ে সম্পন্ন হয়েছে। এতে উপকার পাচ্ছে জেলাবাসী।
বিশ্বম্ভরপুর দীগেন্দ্র বর্মণ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোশারফ হোসেন ইমন বলেন, শুধু বিশ্বম্ভরপুরই নয় পুরো জেলা বর্তমান সরকারের সময়ে উন্নয়ন অবকাঠামোয় বদলে গেছে। প্রবীণরা জানিয়েছেন গত এক শতাব্দিতেও এই অঞ্চলে এমন অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়নি। অবহেলিত এই জেলার উন্নয়নের অংশীদার হয়ে জনগণের মনে স্থায়ী আসন নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দর্শন চমকে বদলে গেছে সারা দেশ। আমাদের হাওরাঞ্চলের পশ্চাদপদতার দুর্নাম ঘুচিয়ে দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎখাতে কাঙ্খিত উন্নয়নের জন্য তিনি এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অমর হয়ে থাকবেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশজুড়ে। এর ছোয়া লেগেছে সুনামগঞ্জেও। তাই বিদ্যু, শিক্ষা, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে এই জেলায় গত ৭-৮ বছরে মাইলফলক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উন্নয়ন পেয়েছি আমরা। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন বলে নেত্রী আমাদের কথা দিয়েছেন।