হাওর ডেস্ক ::
মহামারী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন (টিকা) আবিষ্কার না হলে বিশ্বের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারী রোধ করা না গেলে সাধারণ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভ্যাকসিন তৈরিতে দেড় থেকে দু’বছর সময় লাগলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এদিকে ভারতে তৈরি টেস্ট কিট ‘এলিজায়’ আড়াই ঘণ্টায় ৯০টি পরীক্ষা করা সম্ভব বলে জানা গেছে। সূত্র টাইম নাউ।
হপকিন্সনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ডেভিড বিশানি বলেন, যে কোনো টেকসই উন্নয়নের অন্যতম বড় স্তম্ভ জনস্বাস্থ্য। কিন্তু করোনাভাইরাস স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনা মোকাবেলায় তাই ভারতে স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর উয়ন্নন করতে হবে। এ জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। সোমবার ভারতের জয়পুরে ইন্সটিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএইচএমআর) আয়োজিত ‘ইফেকট অব কোভিড-১৯ অন ইন্ডিয়ান ইকোনমি : পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রামেটিক ইমপ্লিকেশনস’ শীর্ষক সেমিনারে জন হপকিন্সনস ইউনিভার্সিটির ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশানি এসব কথা বলেন। দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় আরও গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন না আবিষ্কার না হলে ভারতের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। সেমিনারে বতসোয়ানা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. নারায়ণ সিনহাসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে নানা বক্তব্য দেন।
ভারতের টেস্ট কিট ‘এলিজা’ : ভারতের পুনে ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির একটি ল্যাবে টেস্ট কিট ‘এলিজা’ তৈরি করা হয়েছে। অন্যসব কিটের তুলনায় এ কিটের মাধ্যমে কম খরচে এবং কম সময়ে করোনা টেস্ট করা যাবে। রোববার ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এ তথ্য জানান। এরই মধ্যে টেস্ট কিট ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ। একটি কিট থেকে একসঙ্গে ৯০ জনের টেস্ট করা যাবে। শুধু তাই নয়, মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ৯০টি টেস্ট করতে পারবে এলিজা। পুনে ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি ল্যাব কর্তৃপক্ষের দাবি, এলিজা একেবারেই তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরি। যেসব জায়গায় করোনার প্রকোপ বেশি সেখানে এই টেস্ট কিট আপাতত ব্যবহার করা হবে।
যে চার ভ্যাকসিনে করোনা নিপাতের আশা : বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনার সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিনের জন্য শতাধিক গ্রুপ দিনরাত কাজ করছে। একটি কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করতে বছরের পর বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ, ভ্যাকসিন তৈরির পর তা মানবদেহে প্রয়োগ করে কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও নিরাপদ কি না, তা যাচাই করা হয়। এসব করতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আবার করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ বদলে ফেলায় তৈরি ভ্যাকসিন কাজ করবে কি না, সেটিও চিন্তায় ফেলছে বিজ্ঞানীদের।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। ফল যাচাইয়ের পর মিলবে চূড়ান্ত অনুমোদন। আর কাজটিও অনেক সময়সাপেক্ষ। তবে অন্তত দেড় থেকে দু’বছর কিংবা কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে একটি চূড়ান্ত ভ্যাকসিন পেতে। এইচআইভির ভ্যাকসিনের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, হয়তো করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম নাও হতে পারেন বিজ্ঞানীরা।