1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

পেরুয়ার বীরাঙ্গনা কুলসুমের সম্বল তিনটি গরুই মারা গেছে…

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০, ১১.৫২ এএম
  • ৩১৪ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার পেরুয়া গ্রামের অসহায় ও হতদরিদ্র বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা কুলসুম বিবির শেষ সম্বল তিনটি গরু এক এক করে মারা গেছে। রহস্যজনক রোগে হঠাৎ তার গরুগুলো মারা যাওয়ায় মুষড়ে পড়েছেন তিনি। গরুর চিন্তায় তার ঘুম ও খাওয়া দাওয়া কমে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
কুলসুম বিবি ও তার স্বজনরা জানান, স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত তিনি উপেক্ষিত। গত বছর সরকার তাকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ বছর থেকে তিনি ভাতা পাচ্ছেন। এর আগে ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। থাকতেন দরিদ্র পুত্রের কাছে। এসময় তিনি ভালো মন্দ না খেয়ে তিনটি বাছুর কিনেছিলেন। সেগুলোকে এই বৃদ্ধা অবস্থায় নিজেই মাঠে ঘাস খাওয়াতেন এবং লালন পালন করতেন। ৩ মাস আগে অজ্ঞাত রোগে বাছুরসহ তার একটি গাভি মারা যায়। বাকি থাকে পোয়াতি আরেকটি গাভী। এই মাসেই এই গাভিটি বাচ্চা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ৯ মে রাতে হঠাৎ ছটফট করতে থাকে গাভিটি। গাভীর এই অবস্থা দেখে ঘুম ভেঙ্গে কান্নাকাটি শুরু করেন তিনি। স্বজনরা ও প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসেন। তার চোখের সামনেই গাভিটি মারা যায়। একে একে তার একমাত্র সম্বল তিনটি গরু মারা যাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। স্বজনরা জানান এই টেনশনে খাওয়া ধাওয়া ঘুমানো কমিয়ে দিয়েছেন বীরাঙ্গনা কুলসুম।
বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবির নাতি শামিম বলেন, নানী খুব কষ্ট করে তিনটি গরুর মালিক হয়েছিলেন। এই বয়সেও তিনি গরু তিনটিকে কষ্ট করে খাওয়াতেন। দুটি গরু ৩ মাস আগে মারা গেছে। শেষটিও পোয়াতি অবস্থায় দুদিন আগে রাতে ছটফট করে মারা গেছে। এরপর থেকেই তিনি কান্নাকাটি করছেন। খাওয়া-ধাওয়া ও ঘুমানো কমিয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে সম্প্রতি এলএসডি রোগে হাওরের বিভিন্ন এলাকার গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। এ নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান খান দিরাই-শাল্লা ছুটে গিয়ে দিনব্যাপী ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেন। ওইদিন তিনি বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবির সঙ্গেও দেখা করে তাকে স্বান্তনা দিয়ে আসেন।
মুক্তিযোদ্ধা কুলসুম বিবি বলেন, অনেক খষ্ট খইরা তিনটা গরু বানাইছলামরে ভাই। এক এক কইরা তিনটাই মইরা গেছে। এখন আমার চওকে ঘুম নাই, মুকো কুন্তা যায়না। আরেকবারযে গরুর মালিক অইমু হেই খেমতাও নাই। আমি এখন কিতা খরতাম- হেই চিন্তায় ভালা লাগেনা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান খান বলেন, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা কুলসুম বিবির সঙ্গে কয়েক মাস আগে আমি দেখা করেছি। এখন শুনলাম আবার তার শেষ গাভিটিও মারা গেছে। আমি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত খামারি হিসেবে তার নাম অন্তভূুক্ত করে সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছি।
সুনামগঞ্জের পেরুয়া-ভক্তারপুর গ্রামের সাহসী বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবি এলাকার প্রতাপশালী রাজাকারদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো মুখ খুলে জাতির সামনে আসেন ৭ বছর আগে। এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতিতদের আশ্রয় দেওয়ায় পেরুয়ার দালাল খালেকের লোকজন তার স্বামীকে হত্যা করে। তার সম্ভ্রম হরণ করে। স্বাধীনতার পরে তিনি ভিক্ষা করে জীবন চালাতেন। একমাত্র তিনিই এলাকার রাজাকারদের তুই রাজাকার বলে সম্বোধন করতেন। এ কারণে রাজাকার ও তাদের স্বজনরা তাকে ‘পাগলি’ বলতো। তাকে ভিক্ষা দিতেও বারণ করতো। সেই কুলসুম বিবিকে নিয়ে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর প্রথম বারের মতো জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘৪৩ বছর পর মুখ খুললো বীরাঙ্গনার পরিবার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকার রাজাকারদের ভয়াবহতা প্রকাশ পায়। তিনি সাহস করে যোদ্ধাপরাধ মামলার স্বাক্ষীও হয়েছেন। গত বছর সরকার তাকে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দানের পর এবছর থেকে তিনি বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!