বিশেষ প্রতিনিধি::
কারো কাছে তিনি রাজনীতির কবি। প্রাঞ্জল মধুর সুরেলা শব্দে তিনি কথার মালা গাঁথতের। সুভাষ ছড়াতেন। মুগ্ধ হতো সাধারণ মানুষ তার মধুর ও যৌক্তিক কথায়। দেশ-বিদেশের সংসদীয় রাজনীতির ধারার মানুষের কাছে তিনি উপমহাদেশের সেরা পার্লামেন্টারিয়ান, প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। জাতীয় আন্তর্জাতিক সাংবিধানিক সংকটকালে তিনি দিক-নির্দেশনা প্রদান করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি অধিনায়ক। যার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ১৯৭১ সনে শত্রুমুক্ত করেছিলেন দেশ। হাওর-ভাটির সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। সারাজীবন সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্ছার ছিলেন। সাধারণ মানুষের নেতা হয়ে রাজনীতি শুরু করা এই নেতা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জেলার সর্বহারা মানুষেরই পক্ষেই ছিলেন। সেই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান জনতা। চোখের জলে লাখো মানুষ শেষ বিদায় জানিয়েছেন প্রিয় নেতাকে। তারা নেতা হারানোর শোক বহন করছেন বুকে কালোব্যাজ ধারন করে।
রবিবার ভোরে জননেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে হাওর-ভাটির জনপদ ও তার জন্মস্থান সুনামগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের মানুষ। সোমবার দুপুর ১ টা ২০ মিনিটে প্রিয় নেতার মরদেহ সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে আসলে আদালত চত্বরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনতার ঢল নামে। পুলিশ লাইনস্থ হেলিপ্যাড থেকে এম্বুলেন্সযোগে যখন প্রিয়নেতাকে শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় তখন রাস্তায় দাড়িয়ে সর্বস্তরের জনতা শ্রদ্ধা জানান। অনেক বয়স্ক মানুষ তাকে শেষ নজর দেখার জন্য জড়ো হলেও মানুষের ¯্রােতের কাছে ঘেষতে পারেননি। দূরে থেকেই অর্ঘ্য দিয়েছেন প্রিয়জনকে।
শহীদ মিনারে নিয়ে আসার পর প্রায় ৫০ মিনিট মরদেহ রাখা হয় সেখানে। এখানে তাকে গার্ড অব অনার দিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনের লোকজন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের নেতৃত্বে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শেষ শ্রদ্ধা জানান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, ছাতক দোয়ারা আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজ, হুইপ সাহাব উদ্দিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পঙ্কজ দেবনাথ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন, আজিজুস সামাদ আজাদ প্রমুখ। জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পরিবারের পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সুরঞ্জিতপুত্র সৌমেন গুপ্ত। তিনি বলেন, আপনারা আমার বাবাকে সুরঞ্জিত বানিয়েছিলেন। তিনি আজীবন আপনাদের ভালোবাসা মাথায় তুলে রেখেছিলেন। তার সন্তান হিসেবে এবং তার পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরাও আপনাদের ভালোবাসা চাই।
দুপুর আড়াইটায় সুনামগঞ্জ থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ তার নির্বাচনী এলাকা শাল্লা উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৩ টা ২৫ মিনিটে শাল্লা শাহিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান উপজেলার সর্বস্তরের জনতা। সেখানেও গার্ড অব অনার শেষে আওয়ামী লীগ, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দল শ্রদ্ধা জানায়। এখান থেকে বিকেল ৪ টায় তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় প্রিয় জন্মভূমি দিরাইয়ে। প্রথমে দিরাই জগন্নাথজিউর মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সোয়া চারটায় নিয়ে আসা হয় বালুর মাঠে। এখানে নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লা উপজেলার সর্বস্তরের হাজার হাজার জনতা শ্রদ্ধা জানায় প্রিয় নেতাকে। দিরাই-শাল্লায় শেষ বিদায়ে ঢল নামে মানুষের। প্রিয় নেতাকে একবার দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠেন তারা। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে শ্রদ্ধার্র্ঘ্য নিবেদন। রাত হয়ে যাওয়ায় ভালোবাসার মানুষদের শেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন অপূর্ণ রেখেই বাসার প্রাঙ্গনে এসে শেষকত্যৃ শুরু হয়।