সাজ্জাদ হোসেন শাহ্,::
গত ১০ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত হয় এবং শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসমাগম না করে কেনাকাটা করার নির্দেশনা থাকলেও এর কোনকিছুই মানা হচ্ছে না হাওর বেষ্টিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাট বাজার গুলোতে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার কথা থাকলেও, বেচাকেনা চলছে রাত অবধি! খোলা রয়েছে সব ধরনের দোকানপাট। নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসনিক তৎপরতাও চোখে পরেনা আগের মতো। সবমিলিয়ে জনসাধারণের মাঝে করোনা সংক্রমিত হবার ঝুঁকি বেড়েছে দ্বিগুণ।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ৮০ সন্দেহভাজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে এর মধ্যে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো গেলে শনাক্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে, কারণ তাহিরপুরে করোনা শনাক্তের যথেষ্ট কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, বহিরাগত জনশ্রোত।
এতো কিছু আশঙ্কার মধ্যেই উপজেলার ছোট বড় অর্ধ্ব শতাধিক হাটবাজার গুলোতে ঈদের আমেজ নিয়ে করোনা ভীতির কোন তোয়াক্কা না করে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে চলছে কেনাবেচা। এ যেন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নির্দেশনায় ১০টি শর্তে দোকানপাট খোলা রাখার কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো ৫জনের বেশি একসাথে ভীড় করা যাবেনা, ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েরই মাস্ক ব্যবহার, দোকানের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশ স্প্রে ছিটানো কিন্তু অধিকাংশ দোকানপাট গুলোতে এসব শর্তের কোনটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আর ক্রেতা বিক্রেতা কেউই এসবের পাত্তা দিচ্ছে না।
ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, রিকসাসহ অন্যান্য যানচলাচল স্বাভাবিক, লোকজন গাদাগাদি করে বসে এসব যানবাহন করে বাজারে আসছে। সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম বাণ্যিজিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আমেজে উপজেলার দূর দূরান্ত এলাকা হতে কেনাকাটা করার জন্য সকাল থেকেই দলবেঁধে ভীড় করছে লোকজন। নারী-পুরুষ, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা, আবার অনেক অভিভাবকদের সাথে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও এসেছে ঈদের কেনাকাটা করার জন্য। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, করোনা ভাইরাসকে আমরা জয় করেছি, এসব ভাইরাসের আর কোন অস্তিত্ব নেই! সবি কল্পকথা!
এতো জটলার ভিড়ে ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে কেনাকাটা করছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ভয় নেই? উপজেলার বড়ছড়া থেকে বাদাঘাট বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা কয়লা ও চুনাপাথর ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়ার কাছে জানতে এমন প্রশ্ন করলে, তিনি জানান, সামনে ঈদ। নতুন পোষাক কিনতে ছেলেমেয়েরা বায়না ধরলো। তাদেরকে কোনভাবেই বুঝানো গেলো না, শেষমেশ উপায়ন্তর না পেয়ে কেনাকাটা করতে বের হলাম অনেকটা বাধ্য হয়ে। আর ভয় তো কিছুটা আছেই কিন্তু উপায় নেই বের না হয়ে। মুখে মাস্ক নেই, শারীরিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। দেদারসে কেনাকাটা করে যাচ্ছেন, এতে করে নিজেকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমনের ঝুঁকিতে টেলে দেয়া হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে কেনাকাটা করতে আসা শ্রীপুর (দ.) ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর আলী বলেন, বছর ঘুরে ঈদ আসে। তাই বাড়ির সবাই নতুন পোষাকের জন্য বারবার তাগিদ দিচ্ছে। নতুন কাপড় না কিনলে পরিবারের সদস্যদের মন রক্ষা করা যাবেনা তাই এতো কিছু না ভেবে কেনাকাটা করতে আসলাম। কেনাকাটায় ক্রেতা বিক্রেতা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা, জটলা বেঁধে লোকজন ভীড় করছে দোকানে বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন? উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকার পর কেনাবেচা করছি, পাওনাধার, দোকানভাড়া, কর্মীচারীদের বেতন সংসার খরচ সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতি মাথায় কাজ করছেনা। কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে পারব সে চিন্তাই সারাক্ষণ মাথায় ঘোরপ্যাঁচ খাচ্ছে। আগে তো পেট বাঁচাই, তারপর করোনা! এতো জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করা যাবে এমন কোন উপায় নেই দোকানপাট গুলোতে। লোকজন হুমড়ি খেয়ে, গাদাগাদি করে দোকানগুলোতে ভীড় করছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলে দেয়াটা ঠিক হয়নি। কারন এতে করে আমাদেরকে সংক্রমিত হবার ঝুঁকিতে একধাপ এগিয়ে দেয়া হলো, এমনই আশঙ্কার কথা জানালেন, শিক্ষক নিপু সরকার।
শুরুতে লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসনিক যে মনিটরিং ছিল তেমনটি আর দেখা মিলছে না এখন। যে কারনে লোকজন হুমড়ি খেয়ে বাজার গুলোতে ভীড় করার সাহস পাচ্ছে, যদি আগের ন্যায় পুলিশি টহল ও নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসনিক নজরদারি করা হয় তাহলে এ জনস্রোত টেকানো যাবে, এমনই অভিমত স্থানীয় সচেতন মহলের।