হাওর ডেস্ক ::
করোনা পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলেও অতিদারিদ্র্যের কারণে পেটের দায়ে শিশুশ্রমে ঝুঁকে পড়বে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরা। ফলে মোট শিক্ষার্থীর অন্তত ৩০ শতাংশ আর বিদ্যালয়ে না ফেরার আশঙ্কা আছে। গতকাল সোমবার অনলাইনে ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবিলা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা এমন আশঙ্কা করেছেন।
তারা বলেন, একই কারণে বাড়বে দারিদ্র্য, এতে কন্যাশিশুদের বাল্যবিবাহও বাড়বে। করোনার কারণে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, পুষ্টিহীনতা বাড়বে। তাই পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগে সরকারের একাধিক জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং’ (সানেম)-এর উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা এবং সানেমের রিসার্চ
ইকোনমিস্ট জুবায়ের হোসেন প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। ওয়েবিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৭০ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিক যুক্ত হন। ওয়েবিনারটি সানেমের ফেসবুক পাতা থেকেও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, করোনার পরে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকবে না। খাবারের অভাব তাদেরকে শ্রম দিতে বাধ্য করবে। কারণ চলমান মহামারীর ফলে অনেক গরিব পরিবার আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়বে, সেক্ষেত্রে তাদের অনেকেই সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাতে চাইবে। এই ৩০ শতাংশ যারা ঝরে পড়তে পারে, তাদের একটা ডাটাবেইস সরকারিভাবে এক্ষুনি করা দরকার। এ কাজ ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদের দিয়ে করালে হবে না। তারা নিজেদেরে ভাই-ভাতিজার নাম ঢোকাবে। এ তালিকা শিক্ষকদের দিয়ে করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশর দরিদ্র পরিবারগুলোর শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য মাসে ৩০০/৪০০ টাকা বৃত্তি ও একবেলা করে খাবারের ব্যবস্থা সরকারকে এখন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনলাইন শিক্ষা বৈষম্য তৈরি করে দিচ্ছে। মহামারী-উত্তর পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য অনেক শিক্ষার্থী পক্ষেই শিক্ষা উপকরণ ক্রয় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এসব সমস্যা সমাধানে পিপিপি অর্থাৎ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
রাশেদ কে চৌধুরী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে যে গাইডলাইন দিয়েছে, সেখানে বলা আছে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক দিতে হবে। আমাদের দেশে তাহলে স্কুল-কলেজ পুনরায় খুলে দিলে মিলিয়ন মিলিয়ন মাস্ক লাগবে। সেই প্রস্তুতি কি আমাদের আছে? তিনি বলেন, মহামারীর ফলে শিক্ষায় বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে। মহামারী শেষ হয়ে যাওয়ার পরে স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়বে। ঝরে পড়ার হার বাড়লে বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বাড়বে। বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন হওয়া নিয়েও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, আগামী বাজেটে কোনোভাবেই শিক্ষাকে কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না, বরং অগ্রাধিকার দিতে হবে।