1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

রণেশ ঠাকুরের গানের আসরঘরে আগুন: দুর্বৃত্তদের বিচার চাই।। স্বকৃত নোমান

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০, ৫.৩৭ পিএম
  • ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে

বাউল রণেশ ঠাকুরের বাউলগানের আসরঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুদিন আগে। আমরা সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীরা নীরব, নিশ্চুপ। যেন কিছুই ঘটেনি। যেন ওটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর কিছু নেই। এ নিয়ে শীর্ষ সংস্কৃতিজনরা এখনো কোনো প্রতিবাদ জানাননি, সিনিয়র কোনো কবি-সাহিত্যিক কথা বলেননি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কোনো কথা বলেননি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা কোনো বক্তব্য দেননি। চারদিকে শ্মশান-নিরবতা।

রণেশ ঠাকুর কে? তিনি হচ্ছেন প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী শাহ আবদুল করিমের প্রধান শিষ্য। তাঁরা একই বাড়ির মানুষ। রণেশ ঠাকুরের বাবা রবনী মোহন চক্রবর্তী ছিলেন সুনামগঞ্জ হাওরাঞ্চলের বিখ্যাত কীর্তনিয়া ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। জীবৎকালে শাহ আবদুল করিমের বিরুদ্ধে যখন ধর্মান্ধ গোষ্ঠী উঠেপড়ে লেগেছিল, রবনী মোহন তখন তাঁকে নানাভাবে মানসিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন। রণেশ ঠাকুরের ভাই প্রয়াত রুহী ঠাকুর ছিলেন শাহ আবদুল করিমের প্রধান শিষ্য। দু-ভাইয়ের গুরু ছিলেন শাহ আবদুল করিম। দুজনেই তাঁকে ‘গুরুভাই’ ডাকতেন। রণেশ ঠাকুর নির্বিরোধ একজন মানুষ। তাঁর রচিত প্রায় সহস্রাধিক বাউল গান রয়েছে। তিনি গান বাঁধেন, সুর করেন, বিভিন্ন আসরে সেসব গান গেয়ে থাকেন। করোনা দুর্যোগের আগে ঐ আসরঘরে প্রতিদিনই বাউলদের আসর বসতো। সেখানে ছিল তাঁর বাদ্যযন্ত্র, গানের বইসহ বাউল গানের মূল্যবান উপকরণ ঢোল, ছইট্টা, দোতরা, বেহালা, হারমুনিয়ামসহ নানা যন্ত্র। প্রায় চল্লিশ বছরের সাধনার সকল যন্ত্রপাতি তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। সব ছাই হয়ে গেল।

কারা তাঁর আসরঘরটি পুড়িয়ে দিল আমরা অনুমান করতে পারি। ভারত থেকে লোকজন এসে পোড়াইনি। পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার থেকে কেউ এসে পোড়ায়নি। আমরা জানি জীবৎকালে লালন সাঁইকে কারা অপমান-অপদস্ত করেছিল। আমরা জানি কারা আগুন দিয়ে বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’সহ তাঁর ব্যবহৃত বিরল সংগ্রহগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা জানি কারা পালাকার শরিয়ত বয়াতীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠিয়েছে। আমরা জানি কারা পালাকার রীতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিল। সুতরাং আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি কারা রণেশ ঠাকুরের আসরঘরটি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা বাঙালি সংস্কৃতির শত্রু, বাঙালির শত্রু, এই দেশের শত্রু।

রাজনীতিবিদদের কথা থাক। আমাদের দুর্ভাগ্য, সংস্কৃতির শক্তি বোঝে এমন রাজনীতিবিদ আমাদের নেই। কিন্তু কবি-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিজনরা এই শত্রুদের বিরুদ্ধে নীরব কেন? কার ভয়ে তাঁরা নিশ্চুপ? শত্রুরা যদি বাঙালি সংস্কৃতির সমস্ত চিহ্ন মুছে দেয়, বাঙালি জাতিটিকেও এই ভূখণ্ড থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, তবু যেন তাঁরা মুখ খুলবেন না। তাঁদের এই নীরবতা একদিন কাল হবে। ‘অসৎ লোকের কর্মকাণ্ডে সমাজ ধ্বংস হয় না, সমাজ ধ্বংস হয় সৎ লোকের নীরবতায়’―জানি না উক্তিটি কার। সঠিক কথা।

বাউল রণেশ ঠাকুরের আসরঘরে যারা আগুন দিয়েছে অবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাই। প্রশাসন ইচ্ছে করলেই দুবৃত্তদের খুঁজে বের করতে পারবে। আমরা প্রশাসনের সদিচ্ছা চাই। দুর্বৃত্তদের বিচার চাই। জানি এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। তবু সরকারের কাছে দাবি, রণেশ বাউলের সেই পোড়াভিটায় আরেকটি আসরঘর তুলে দেওয়া হোক এবং পুড়ে যাওয়া সকল বাদ্যযন্ত্র নতুন করে কিনে দেওয়া হোক। দুর্বৃত্তদের বুঝিয়ে দেওয়া হোক, তাদের অপচেষ্টা যে কোনোদিন সফল হবে না।
লেখক: কথাসাহিত্যিক। সহকারি পরিচালক বাংলা একাডেমি।
(লেখকের ফেইসুব থেকে নেওয়া)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!