স্টাফ রিপোর্টার::
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের শীষ্য বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের তালিমঘর দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা ভষ্মীভূত ও তার ৪০ বছরের সঙ্গীত উপকরণ পুড়ে যাওয়ায় বিমর্ষ বাউলকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক গবেষক অমি রহমান পিয়াল। তিনি তার একযুগ ধরে ধরে রাখা হাতের কালো রঙের প্রিয় রিস্ট ব্যান্ড নিলামে তুলে এই অর্থ সহায়তা তুলে দিয়েছেন বাউল রণেশ ঠাকুরকে। বিশ্বব্যাপী মানবতাবাদী ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ফেরদৌস খন্দকার এই রিস্ট ব্যান্ডটি ১ লক্ষ ১ টাকায় নিলামে কিনে নিয়ে সমুদয় টাকা বাউল কন্যা জুঁই ঠাকুরের একাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত রবিবার রাতে দুষ্কৃতিকারীরা বাউল রণেশ ঠাকুরের উজানধলস্থ গ্রামের গানের তালিমঘরটি তার চল্লিশ বছরে সংগ্রহিত যন্ত্রাংশ, গানের খাতা, পাল্ডুলিপি, বাউল মহানজনদের রচনাসমগ্রসহ মূল্যবান জিনিষপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই খবরটি অনলাইনে পড়ে সুইজারলেন্ডে বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রথম সারির অনলাইন যোদ্ধা অমি রহমান পিয়াল বাউলকে সহায়তার উপায় খুঁজতে থাকেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টেটাস দিয়ে তার এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির পক্ষের যোদ্ধাদের সহায়তার বিষয়টি অবগত করেন। তার প্রিয় ও সবচেয়ে পছন্দের কালো রঙের রিস্ট ব্যাজটি নিলামে তুললে তা কিনে নেন করোনাকালে মানবতার ডাক্তার হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ডা. ফেরদৌস খন্দকার। তিনি ১ লক্ষ ১ টাকায় নিলামে নিয়ে বৃহষ্পতিবার বাউল কন্যা জুই সরকারের একাউন্টে সমুদয় টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাউলের বিপদকালীন সময়ে ঘোষিত সহায়তা দিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন অমি রমান পিয়াল। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, ‘প্রতিজ্ঞা পূরণ করলাম। প্রতিশ্রুতি রাখলাম। সুনামগঞ্জের বাউল রণেশ ঠাকুরের সম্মানে এক লক্ষ টাকা বিপদকালীন উপহার দিবো বলছিলাম। একটু আগে নিশ্চিত হইলাম তার কন্যা জুই ঠাকুরের একাউন্টে এক লক্ষ টাকা পাঠানো হইছে। তিনি সেটা পাইছেন। পুরা ব্যাপারটায় আসলে আমার কোনো কৃতিত্ব নাই, পুরাটাই আমার সেই লড়াইয়ের মেমোয়ার কেনা ছোট ভাই ডাঃ Ferdous Khandker এর। আমি স্রেফ উছিলা মাত্র। আমি ডাক দিছি ও সেই ক্যাম্পাসকালীন সময়ের মতোই বিনাপ্রশ্নে কোনো কথা ছাড়াই পাশে আইসা দাড়াইছে। ওরে ধন্যবাদ দিয়া ছোট করবো না, তবে এখনও আমার উপর আস্থা রাখে এই বিশ্বাসটার জন্য কৃতজ্ঞতা তারে। করোনা দূর্গতদের জন্য সরকারী সাহায্য আছে, প্রচুর মানুষ নিজের উদ্যোগেও সাহায্য করতেছেন, পোলাপাইন দিনরাত খাটতেছে। বাউলরা আমাদের আবহমান সংস্কৃতির অংশ। তাদের পাশে কেউ নাই। কতরাত কাটছে আমার শাহ আবদুল করিমের গানে। এইটা ক্ষুদ্র সামর্থে ক্ষুদ্র প্রতিদান। যারা এই বিষয়টায় আমারে সবরকম তথ্য এবং অন্যভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের সবাইকেও ধন্যবাদ…’
বাউল রণেশ ঠাকুর হাওরটুয়েন্টিফোরডটনেটকে বলেন, বৃহষ্পতিবার আমার মেয়ের একাউন্টে এক লক্ষ টাকা এসেছে। যারা আমার বিপদে এই সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি জানিনা তারা কেন আমাকে ভালোবাসেন। তাদের এই ভালোবাসা মাথায় নিয়ে আমি আবার দোতারায় সুর তুলব। গানে গানে আমার প্রতিবাদ জারি রাখব। তিনি বলেন, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম আমার গুরুভাই ছিলেন। তিনি যেভাবে মানুষের অধিকার আদায়ের কথা গানে সুরে বলেছেন আমিও তার কথা ও গানে এই প্রতিবাদের দ্বারা অব্যাহত রাখব। মানুষের কথা বলব গানে গানে। দেশ বিদেশের যারা আমার দুঃসময়ে পাশে দাড়িয়েছেন, প্রতিবাদ করছেন আমি তাদের প্রতি ঋণী।