অবশেষে ১জুলাই থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান ,ব্যবসা-বানিজ্য ও গণপরিবহন।এর মাধ্যমে ৬৬দিনের সাধারণ ছুটির নামে চলমান লগডাউন তুলে নেয়া হচ্ছে।সরকার লগডাউনের মাধ্যমে মূলত দু’টো বিষয়ে খেয়াল রেখেছিলো।প্রথমত,বিশ্বের কোথায়ও ভেকসিন আবিষ্কারের অপেক্ষায় থাকা আর দ্বিতীয়ত,সংক্রমনের মাত্রা কম রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা। বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এতাদিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিলো।ইউরোপের দেশগুলোতেও লগডাউন তুলে দেয়া হচ্ছে;এমনকি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বিশ্বের সুুপার পাওয়ার আমেরিকায়ও লগডাউন তুলে দেয়ার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ।এখন দেখি লগডাউন থাকা অবস্থায় আমরা কেমন ছিলাম। এই সময়ে সরকার তার সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে মানুষকে ঘরে রাখার।কিছু জায়গায় অনিয়ম করে সরকারের দৃষ্টান্তমূলক অনেক কর্মসূচি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন কেউ কেউ।ধারাবাহিকভাবে ত্রান কার্যক্রম পরিচালনা করা, ৫০লক্ষ পরিবারকে এককালীন ২,৫০০টাকা হারে সহায়তা দেয়া সরকারের অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিলো।সব কিছুর পরেও বিরাট একটা অংশ যখন করোনা নিয়ে উদাসীন,ফেরিঘাটে,বাজারে ও গার্মেন্টস কর্মীদের ফ্যাক্টরীগামী হওয়ার ফলে হাজার হাজার মানুষের যখন সামাজিক দূরত্ব বা ন্যূনতম সুরক্ষা সমগ্রী ব্যবহার না করার উৎসবে মেতেছিলো তখনই আসে নতুন ঘোষণা।সরকার সীমিত আকারে ঈদের ্আগে বিপনীবিতান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়।সেখানেও মানুষের মধ্যে তীব্র সচেতনার অভাব লক্ষ্য করায় আক্রন্ত আর মৃতের গ্রাফ যখন ক্রমশ উর্ধ্বগামী তখন সব কিছু খুলে দেয়ার ঘোষণা আসলো।করোনা চিকিৎসার কোন প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি এই সত্য মাথায় রেখেই আক্রান্ত ব্যাক্তির জটিলতা দেখা দিলে সেটা মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে ব্যাপকভাবে প্রস্তুত রাখার দরকার হলেও সেই রকম প্রস্তুতি কিন্তু আমাদের দেশে নাই।একই সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু না করে যেহেতু এখন আর উপায় নেয়,তখন আপনাকে বাসা থেকে বের হতেই হবে।তাই এই মূর্হতে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেককেই আলাদা ব্যাক্তিগতভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে,নিজের নিরাপত্তা নিজের হাতেই তুলে নিতে হবে।আগামি দিনগুলোতে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং এটা ব্যাবহারে বাধ্য করতে হবে সরকারকেই, প্রয়োজনে কঠোরভাবে বল প্রয়োগ করতে হবে।গণপরিবহনে যাত্রী নেয়ার আগেই প্রতিদিন অন্তত দুইবার জীবানুনাশক ছিটিয়ে সেটা পরিষ্কার রাখতে হবে।প্রতিটি যাত্রীকে গাড়িতে ওঠানোর আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবানুমুক্ত করতে হবে।কল কারখানায় কঠোরভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চত করতে নিয়মিত জ্বর মেপে, সবান বা জীবানুনাশক দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করাতে হবে।সবচেয়ে ভালো হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পরিবহন চালু করা।কোন কর্মীর মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আলাদা আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা জরুরি।সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই টেস্ট করে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।যেটা সবচেয়ে জরুরি সেটা হচ্ছে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে সুস্থ থাকার চেষ্টায় সামিল হওয়া।নিজেদের অভ্যাস পাল্টে ফেলা।বাইরে থেকে বাসায় ফিরে কাপড়-চোপর ধোয়ে ফেলা বা ঢাকনাযুক্ত কোন পাত্রে রেখে দেয়া এবং নিজেরা ভালকরে হাত-মুখ ধুয়ে ফেলা।গোসল করে ফেলাটা সবচেয়ে নিরাপদ।তারপরে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে কঠোরভাবে।নাকে-মুখে হাত দেয়ার অভ্যাসকে চির বিদায় জানতেই হবে। এতাদিন বাইরের খাবার এড়িয়ে চলার অভ্যাসটা চালিয়ে যেতে হবে।শেয়ার করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।আশেপাশের কারোও মুখের সামনে গিয়ে কথা না বলে একটু দূরে থেকে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হবে। আর হাত মেলানো বা কোলাকুলিরর অভ্যাসতো আপাতত ইতি টানাই আছে।
এতা কিছু করতে হবে আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য।কারন আপনার কিছু হলে আপনার পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।আর সমাগ্রিক হিসেবে আপনি হয়তো একটা পরিসংখ্যান মাত্র।আশা করি এই এতো কিছু বাদ দেয়ার বা নিজেদের পছন্দকে কাটছাট করতে করতে এক সময় আমরা ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবো এবং করেনামুক্ত পৃথিবীতে আপনি আমি মুক্তভাবে ঘুরতে পারবো।হাসতে পারবো মন খুলে।
লেখক:
মোহাম্মদ সেলিম মিয়া
প্রভাষক,নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি।