স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ সরকরি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর কল্পনা তালুকদার আর নেই। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি স্বামী, এক কন্যাসহ অসংখ্য আতœীয়-স্বজন রেখে মারা যান। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।
প্রফেসর কল্পনা তালুকদার ছিলেন এক আলোকিত নারী। তিনি সপ্তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিয়ে কক্সবাজার, রাজবাড়ি ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন। কয়েক বছর আগে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে প্রফেসর হিসেবে অধাপনায় যুক্ত ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জ সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সনে এসসএসসি, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৫ সনে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি কবিতা আবৃত্তি, উপস্থাপনা, মাটির মূর্তি তৈরি ও ছবি আকার জাজও জানতেন। বহুমুখি প্রতিভাধর ছিলেন তিনি।
প্রফেসর কল্পনা তালুকদারের পিতা কালী কুমার তালুকদার ও মাতা সুযতœা তালুকদার। ১৯৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ক্লাস থ্রী থেকে ডাবল প্রমোশন পেয়ে ৫ম শ্রেণিতে সতীশ চন্দ্র সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (এসসি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) ভর্তি হন। তিনি এসসি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ এ এসএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করেন ১৯৭৫ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাস্টার্স ও একই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মাস্টার্স অধ্যয়নকালেই সোনালি ব্যাঙ্কে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে চাকুরি শুরু করেন। চাকুরিকাল ছিল দুই বছর। সপ্তম বিসিএস এর মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। কক্সবাজার সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসাবে শিক্ষকতা জীবনের শুরু। ১৯৮৮-১৯৯২ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে, ১৯৯২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত রাজবাড়ি সরকারি কলেজে এবং ২০০১ থেকে ২০১৪ সালের পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি প্রফেসর পদে পদোন্নতি হয়ে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে সংযুক্ত হন। এখান থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চা, মাটির মূর্তি বানানো ও ছবিও আঁকতেন। ১৯৯২ সনের ফেব্রুয়ারিতে সুনামগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিতে তার নিজের তৈরি মাটির মূর্তি তৈরির একটি একটা প্রদর্শনীও করেছিলেন।
তার একমাত্র সন্তান মধুরিমা সাহা ২০১৩ সালের সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে সারাদেশে প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছিল।
এদিকে প্রফেসর কল্পনা তালুকদারের অকাল প্রয়াণে শোক জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সুধীজন। তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।