বিশেষ প্রতিনিধি::
এক.
মঙ্গলবার সকালে প্রভাতফেরি করে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে দেখি হাটুজল। ফুল হাতে প্রভাতফেরিতে আসা সোনামনিরা জল দেখে ভড়কে যায়। দ্রুত শাবল এনে দেয়াল ফুটো করে পানি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি আমরা। এভাবেই একুশের প্রভাতফেরি শেষে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানায় সাধারণ মানুষ। বলছিলেন সংস্কৃতি কর্মী রাজীব।
দুই.
সুনামগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য রইসুজ্জামান বলেন, সকালে ফুল দিতে এসে দেখি শহীদ মিনার বেদির চারদিকে পানি। দ্রুত আমরা পানি অপসারণে নামি। ধিরে ধিরে পানি সরে যাওয়ায় জনতা শহীদ বেদিতে তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করেন। তিনি বলেন, এখান থেকেই আমরা প্রতিবাদের ভাষা রপ্ত করেছি। মানবতার কথা শিখেছি। অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধের ডাক দেই এখান থেকেই।
মঙ্গলবার সকালে এভাবেই শ্রদ্ধা ভালোবাসা আর আবেগে প্রায় দুই শতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ জনতা সুনামগঞ্জে অবহেলার শিকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। অবহেলার শহীদ মিনার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেন জনতা।
ভাষাশহীদদের স্মরণ করতে এসে সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির সভাপতি শিক্ষাবিদ চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, চারদিকে সরকারি জায়গা থাকলেও সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সম্প্রসারণ না করে একটি মহল অন্যত্র সরানোর ষড়যন্ত্র করছে। তাই কৌশলে শহীদ মিনারকে অবহেলায় রেখে সংস্কার না করে পরিত্যাক্ত দেখিয়ে দখলের ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আজ হাজারো জনতা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহীদ মিনারকে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় দুই শতাধিক সংগঠন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। শহীদ মিনার নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদেই শ্রদ্ধায় মানুষের ঢল নেমেছে বলে জানান তিনি।
সকালে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতি এমন অবহেলাই প্রমাণ করে এটাকে নিয়ে কেমন ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি সবাইকে আবেগ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এই শহীদ মিনার সংস্কার ও সম্প্রসারনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার ভোরেই বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, যুবলীগ, সুনামগঞ্জ পৌরসভা, জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘর আসর, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিপরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রথম প্রহরে এবং অনেকে প্রভাতফেরি করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জনতা নিজ হাতে ডিএসরোডে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এরপর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে সর্বস্তরের জনতা এটিকে অধিকার আদায়ের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। তারা অশুভ শক্তি প্রতিরোধে এই শহীদ মিনারকেই অধিকার আদায়ের কেন্দ্র হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথাও বলছেন।
মহান বিজয়ের আগে নির্মিত দেশের অনন্য সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ফুলে ফুলে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের জনতা।