স্টাফ রিপোর্টার::
ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসে রক্ত পলাশের মতো ফুটে আছে একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ সেই মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ বাংলাদেশ শুধু নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বর্ণময় কর্মসূচিতে স্মরণ করা হবে দিবসটি। বাঙালি, অবাঙালি সব মানুষ আজ এক হয়ে গাইবে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারীদের উদ্দেশে গান, শ্রদ্ধায় নিবেদন করবে পুষ্পের অর্ঘ্য। শহীদ মিনারে নামবে মানুষের ঢল। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পালিত হচ্ছে।
মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পূর্ণ হবে আজ। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর পরপরই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাদের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়েই শুরু হয় ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের রক্তে রাঙা হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে উত্তাল ছিল দেশ। কেন্দ্রে ছিল ঢাকার ছাত্র-জনতা। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় গুলিতে বিদ্ধ হয়ে প্রাণ দিয়েছেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররা। তাঁদের প্রাণদানের পথ ধরে একাত্তরের যুদ্ধে এসেছিল বাংলাদেশি বাঙালিদের মুক্তি। মুক্তির এ গানের সুর প্রথম তোলা হয়েছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকেই। একুশ বাঙালি চেতনার রঙিন প্রতীক।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ভাষাশহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি মাতৃভাষার দাবিতে সোচ্চার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তত্কালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সৈনিককে, যাঁদের অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি পায় মাতৃভাষার অধিকার। ’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত আট বছরে সরকার দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশাল্লাহ। ”
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘একুশের অম্লান চেতনা সকল ষড়যন্ত্রকারী আধিপত্যবাদী শক্তিকে রুখতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে। তাই এই দুঃসময়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রেরণা জোগাবে বায়ান্নর মহান একুশের শহীদদের আত্মদান। ’
সারাদেশেই যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। হচ্ছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।