হাকিকুল ইসলাম খোকন::
নিউইয়র্ক, ২০জুন শনিবার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পরিবারের উদ্যোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন উপলক্ষে এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সের শুরুতে সকল শহীদের উদ্দেশে ১ মিনিট নিরবতা পালন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রখ্যাত সাংবাদিক কামাল লোহানী সহ আওয়ামী লীগের যে সকল নেতাবৃন্দ ও দেশে-বিদেশে করোনা সংক্রামণে আক্রান্ত হয়ে যারা মৃত্যুবরন করেছেন তাদের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়। মরহূমদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন সহ বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মুনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। দেশে ও বিদেশে করোনা সংক্রামণে আক্রান্ত হয়ে যারা চিকিৎসাধীন তাদেরও রোগমুক্তি কামনা করা হয়। খবর বাপসনিউজ।এরপর ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি, তাৎপর্য ও অর্জনের উপর মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন- বাকসু’র সাবেক জিএস মুক্তিযোদ্ধা ডঃ প্রদীপ রঞ্জন কর এবং মুল বক্তব্যের উপর আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন তালুকদার, সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, ইঞ্জিঃ মোহম্মদ আলী সিদ্দিকী, এ্যাডঃ শাহ মোহম্মদ বকতিয়ার, শরিফ কামরুল আলম হিরা, মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান চৌধূরী, এমএ করিম জাহাঙ্গীর, মেসবাহ অহমেদ, ফরিদ আলম, ইলিয়ার রহমান, অধ্যাপক মমতাজ শাহনাজ, রুমানা আকতার, জালালউদ্দিন জলিল, কায়কোবাদ খান, ইঞ্জিঃ মিজানুল হাসান, মঞ্জুর চৌধূরী, আকতার হোসেন, সুবল দেবনাথ, ছাদেকুল বদরুজামান পান্না, মাহাবুবুল খসরু, শেখ জামাল হোসেন, মোহম্মদ মাঈনদ্দিন, মোঃ আলমগীর, দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, নাদের আলী মাষ্টার, মোঃ জামাল বস্ক, মোঃ মিজনুর রহমান চৌধূরী, ও শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। কনফারেন্সে আরও সংযুক্ত ছিল- রমেশ নাথ, আশাফ মাসুক, জাকির হোসেন হিরু ভূইয়া ,হেলাল মাহমুদ, আশরাফ উদ্দিন , সিরাজুল ইসলাম সরকার, সিবুল মিয়া, মোল্লা মাসুদ, ইঞ্জি: হাসান, টি মোল্লা, উৎফত মোল্লা, রহিমুজ্জামান সুমন, রিণ্টু লাল দাস, ফরিদা আরভি, আতাউর রহমান তালুকদার, হেলেমউদ্দিন, ইফজাল চৌধূরী, জামাল বস্ক, মোঃ আলীমউদ্দিন, শারমিন তালুকদার, রাহিমুল হুদা, সহ আরো অনেকে।
বক্তারা বলেন- বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও পাক-ভারত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় পাকিস্তান জন্মের দুই বৎসর পর ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। মুসলিম লীগেরই প্রগতিশীল ও উদার একটি অংশ নিয়ে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক (রাজনীতিবিদ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রমুখ এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই রাজনৈতিক দলটি খুব দ্রুত পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা অর্জনে সমর্থ হয়। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে একটি সক্রিয় সংগঠন হিসাবে নেতৃত্বে দিতে থাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ।
শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবরের তৃতীয় কাউন্সিল সভায় ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয় যাতে অমুসলিমরাও দলে যোগ দেয়ার সুযোগ পান। দলের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নির্ধারণ করা হয়।
প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, টাংঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০-এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে আওয়ামী মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এর মধ্যে, ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ পেয়েছিল ১৪৩টি আসন।
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে দলে ভাঙন দেখা দেয়। ওই বছরের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারি সম্মেলনে দলে বিভক্তির ঘটনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় মাওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে।
১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর নামে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়ে যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে তেমনি তার কন্যা জননেএী শেখ হাসিনার হাত ধরে এসেছে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। সাফল্য স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার অসংখ্য অর্জন।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাঙালি জাতির অর্জনের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের অর্জনের কিছু নমুনা এখানে তুলে ধরা হলোঃ
ক) আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৭১ সালে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ।
খ) ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনসহ গণতন্ত্র অর্জনের সব আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের অগ্রনী ভূমিকা।
গ) অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-কূটনৈতিকসহ অসংখ্য সাফল্যই এসেছে এই দলের মাধ্যমে ভারতের সহিত সিমান্ত চক্তি ও সমূদ্র চুক্তি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ঘ) পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ বছরব্যাপী পাহাড়ী-বাঙ্গালী সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান ।
ঘ) এই দলের নেতৃত্বে স্বাধীনতার মাত্র ৪৯ বছরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের প্রবৃদ্ধির বৃত্ত ভেঙে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ উন্নীত হওয়া।
ঙ) বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির প্রসার, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু, সর্বসাধারণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বিশ্বের দরবারে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন।
ঙ) মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
চ) মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন ।
ছ) নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত।
জ) গ্লোভ্যাল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগ ইত্যাদি সহ সামগ্রিক পদক্ষেপে বাংলদেশের নেতৃত্বদান বিশ্ব পরিমন্ডে বিশেষভাবে সমাদ্রিত।
ঝ) বাংলদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৭ম দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ।
ঞ) বিশ্বব্যাপী বেশি রেমিট্যান্স আসা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম।
ট) পোশাক রপ্তানিতে একক দেশ হিসেবে বিশ্বে ২য়।
ঠ) খাদ্য শষ্য উৎপাদনে বাংলদেশ আজ স্বয়ং সম্পূর্ণ এবং খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে ১০ম স্থান।
ড) বাংলদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ।
ঢ) বাংলদেশ আজ স্বল্প উন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নত হয়েছে।
ণ) বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে ৩৯ তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ২৯ তম যা দক্ষিন এশিয়ায় ২য়।
ত) কৃষি মন্ত্রনালয়ের জানুয়ারী ২০২০ পর্যন্ত তথ্যানুসারে বাংলাদেশ সবজী, ধান ও আলু উৎপাদনে বিশ্বে যথাক্রমে ৩য়, ৪র্থ ও ৭ম। এছাড়াও মাছে ৪র্থ, আমে ৭ম ও পেয়ারায় ৮ম।
সবশেষে সাংগঠনিক কিছু আলোচনা ও সিন্ধান্ত গ্রহন মধ্য দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স সমাপ্ত হয়।