বিশেষ প্রতিনিধি::
জুন মাসে করোনা রোগ সংক্রমণ রেকর্ড করেছে সুনামগঞ্জ জেলায়। ৩১ মে যেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪৪ জন সেখানে গত ২৪ মে এসে দাড়িয়েছে ৮৭৫জনে। মে মাসে কোন মৃত্যু না থাকলেও জুন মাসে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫জন। বর্তমানে ২১৪জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যরা হোম আইসোলেশনে আছেন। জেলায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সিলেট বিভাগে আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে প্রশাসন গত ১৬ জুন জেলার ২টি পৌরসভাসহ ১৫টি এলাকাকে রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এখনো অনুমোদন না হওয়ায় চলাচল ও ভিড় সবখানেই লক্ষ্যণীয়।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৪জন। তখন পর্যন্ত কোন মৃত্যু ছিলনা। জুন থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আগমণের কারণে করোনার বিস্তার ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়। এখন সংক্রমণের সামাজিক বিস্তৃতিও ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ করোনার ঝূকিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এতে ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষ অবাধে যাতায়াত করতে থাকে। ঝূকিপূর্ণ এলাকা থেকে ছাতক, সুনামগঞ্জ ও দোয়ারার তুলনামূলক সহজ যাতায়াতের কারণে এই এলাকায় আক্রান্তের হারও বেশি লক্ষ্যণীয়।
১ জুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৫ জন, ২ জুন ১৭৪জন, ৩ জুন সংখ্যা ২১৩ জনে দাড়ায়। এই দিন ১ জনের মৃত্যু হয়। ৪ জুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২১৯জন, ৫ জুন ২৪৭জন, ৬জুন এ সংখ্যা ছিল ২৭০। ওইদিন এসে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ায় ৩জনে। ৭ জুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৭০জন, ৮ জুন ৩০৪জন, ৯ জুন ২৩৯জন, ১০ জুন ৩৫০জন, ১১জুন ৩৯৬জন, ১২জুন ৪১৮ জন ছিল মোট করোনা রোগীর সংখ্যা। এই দিন জামালগঞ্জে আরেকজন রোগী মারা যান। ১৩ জুন ৪৩২জন, ১৪ জুন ৫১৮জন, ১৫ জুন ৫৬৩জন, ১৬জুন ৬৪১জন, ১৭ জুন ৬৯৯জন, ১৮ জুন ৭১১জন, ১৯জুন ৭৮৫জন। পরদিন কোন নমুনা সংগ্রহিত হওয়ায় শণাক্ত ছিলনা। ২১ জুন রোগীর সংখ্যা দাড়ায় ৭৮৮ জন, ২২ জুন ৭৯৫ জন এবং ২৩ জুন ৮২৪জনে। ওই দিন দক্ষিণ সুনামগঞ্জে আরেকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২২ জুনের পরিসংখ্যান মতে জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাতকে। এরপরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা। সদরে ১৬৭ জন, দোয়ারা ৬৮জন, বিশ্বম্ভরপুর ২৮জন, তাহিরপুর ২৮জন, জামালগঞ্জ ৬৪জন, দিরাই ২৩জন, ধরমপাশা ১৮জন, ছাতক ২০৯ জন, জগন্নাথপুর ৬২জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ৬২জন এবং শাল্লা উপজেলায় ৩২জন। ২৩ জুন আরো বিভিন্ন উপজেলায় আরো ৩১জনের শরিরে করোনা শণাক্ত হয়েছে। ২৪জুন নতুন করে আরো ২৮জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে জুন মাসে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা।
স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন সংক্রমণের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ছাতক ও সদর উপজেলা। তাদের মতে এই দুই উপজেলার সঙ্গে সরাসরি ঢাকা, নারায়গঞ্জ, কুমিল্লাসহ করোনা ঝূকিপূর্ণ এলাকার অবাধে যানবাহন চালু রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এখন কমিউনিটি পর্যায়ে এর বিস্তৃতি ঘটে গেছে। দুশ্চিন্তায় আছে সাধারণ মানুষজন।
সুনামগঞ্জ বিএমএর সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাস বলেন, সুনামগঞ্জে সামাজিক দূরত্ব মেনে কোন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছেনা। গ্রামে কেউ এসব নিয়ে ভাবছেই না। তাছাড়া ঈদের পর ¯্রােতের মতো মানুষ জেলায় এসে প্রবেশ করেছেন। তাদের মাধ্যমে এখন কমিউনিটি ট্রান্সফার হয়েছে। এ কারণে বেড়েই চলছে করোনা সংক্রমণের হার। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক কঠোরতা ছাড়া বিকল্প নেই।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, লকডাউন খোলার পর এবং ঈদের ছুটিতে করোনা ঝূকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষ জেলায় এসে প্রবেশ করেছেন। সুনামগঞ্জ ও ছাতকের আক্রান্তের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় বাইরের লোকদের মাধ্যমেই করোনার বিস্তার ঘটেছে। কারণ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে সরাসরি সদর ও ছাতকের সঙ্গে সরাসরি দূরপাল্লার বাসের যাতায়াত রয়েছে। তবে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেস্টেও বাড়ানো হচ্ছে। সবাই মিলেই ভয় তাড়িয়ে করোনাকে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, জুন মাসে করোনার উদ্বেগজনক বিস্তারের কারণে আমরা ১৮টি এলাকাকে রেডজোন করে লকডাউনের আবেদন করেছি। এখনো প্রশাসনিক অনুমোদন পাইনি।