স্টাফ রিপোর্টার::
দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় সুনামগঞ্জেও বাস ধর্মঘট চলছে। অচল হয়ে পড়ছে যাতায়াত। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। বুধবারও জঙ্গি স্টাইলে রাস্তায় নেমেছে তারা। তবে এক শ্রেণির পরিবহন শ্রমিক মওকা বুঝে যাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের ভাড়া নিচ্ছে। রাষ্ট্র ও আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে ধর্মঘট ডাকায় তাদেরকে পরিবহন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা সামাজিক মাধ্যমে জনগণকে নিয়ে তাদের প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জের আদালতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ ৫ জন নিহতের মামলায় এক চালকের যাবজ্জীবন কারাদ-ের প্রতিবাদণ্ডে বাস ধর্মঘট পালন করছিলেন কয়েকটি অঞ্চলের শ্রমিকরা। এরপর এক নারীকে হত্যার দায়ে সাভারে এক ট্রাকচালকের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে নতুন করে পরিবহন ধর্মঘট ডাকেন শ্রমিকরা। নেতৃবৃন্দ দুই শ্রমিকের বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া রায় প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক জানান, আদালতের রায়ে ১জন বাস শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ড এবং অপরজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের আহ্বান করেন তারা।
এদিকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসে যাত্রীরা বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে এমন আশায় অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা গ্রাম থেকে আসা এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সকালে শক্তিয়ারখলা গ্রাম সিলেটে যাওয়ার জন্য শহরে এসেছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি গাড়ি ধর্মঘট। এখন নানা সমস্যায় পড়েছি।’
একই উপজেলার চিনাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেন, পূর্ণিমা হাজংও সিলেটে যাবেন। তারা দুই মহিলাসহ কয়েকজন বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। তারা বলেন, ‘আমরা সকালে এসে দেখি গাড়ি বন্ধ। চিকিৎসা এবং জরুরি কাজে জন্য সিলেটে যেতে চেয়েছিলাম। এখন তো বিপদে আছি।’ একই গ্রামের নুর জাহান বেগমও বলেন একই কথা।
চিনাকান্দি গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে অসুখ। রাতে ফোন এসেছে। খুব সকালে সিলেটে যেতে হবে। এখন তো আর যেতে পারছিনা। পরিবহন ধর্মঘটে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’
জগন্নাথপুর উপজেলার আমিরুন নেছা বলেন, ‘খুব ভোরে একটি বাসে করে সুনামগঞ্জে এসেছিলাম। মামলার হাজিরা ছিল আমার। এখন বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি গাড়ি ধর্মঘট। কিভাবে বাড়ি ফিরবো তাই নিয়ে চিন্তায় আছি।’
পৌরশহরের নবীনগরের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়ে সিলেটে মাদ্রাসায় পড়ে। ছুটি কাটিয়ে আজ মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা। কিন্তু নিয়ে যেতে পারছি না। গাড়ি ধর্মঘট। আমাদের ভোগান্তির শেষ কোথায়?’
সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের মঙ্গলকাটা গ্রামের রমজান আলী বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে পারছি না। ধর্মঘট হওয়ায় গাড়ি বন্ধ। মহাবিপদে পড়েছি।’
সুরমা ইউনিয়নের আব্দুল হাই মেম্বার বলেন, ‘আমার বাড়িতে মেহমান আসছিলেন। মেহমানকে গাড়িতে তোলে দিতে এসে দেখি গাড়ি ধর্মঘট।’
ডা. মোরশেদ আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই পরিবহন শ্রমিকরা সন্ত্রাসীতে রূপ নিয়েছে। সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে তারা অবৈধ দাবি দাওয়া আদায় করে নিচ্ছে। তাদেরকে জনগণ নিয়ে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি।
তাহিরপুর উপজেলার বীরনগর গ্রামের বাবুল মিয়া ও বড়ছড়ার গৌরাঙ্গ পাল বলেন, ‘আমরা সিলেটে যেতে আসছিলাম সুনামগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ডে। এখন ধর্মঘটে গাড়ি বন্ধ। বড় সমস্যায় আছি।’
জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল মিয়া জানান, বাস লাইটেসসহ সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে প্রায় ১ হাজার যানবাহন রয়েছে। জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ধর্মঘট পালনের কারণে সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই ধর্মঘট কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।