স্টাফ রিপোর্টার::
সাকিতপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ মনজুর আহমদ লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছেন প্রিয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শোকসভায়। মঞ্চের সামনে ১৫-২০ গজ দূরে বসেছেন তিনি। বক্তারা যখন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিকথা বলছিলেন তখন এই বৃদ্ধকে দেখা গেল কাঁদতে। নিরবে চোখের জল মুছছেন আর ডান হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে জল আড়াল করার চেষ্টা করছেন। তার ঠিক কয়েক সারি পরেই হাতে বামে বসে থাকা সদানন্দপুরের নকুল দাস অঝোরে কাদছিলেন। পাঞ্জাবির নিচের অংশ দিয়ে বারবার মুছছিলেন জল। বক্তারা যত প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন নকুলের চোখ বেয়ে তত জল ঝরছিল। এভাবে নাম না জানা শত শত সুরঞ্জিত ভক্ত, অনুরাগী ও কর্মীরা নিরবে চোখের জল ফেলছিলেন শোকসভায় এসে। প্রৌড়, যুবক ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের লোককেই এভাবে কাদতে দেখা গেছে শোকমঞ্চের আশপাশে। উপস্থিত অনেকেই এই দৃশ্যটি দেখে নিজেরাও নিরবে চোখের জল ফেলেছেন। কোন কোন বক্তা আবেগঘন বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনেককেই ভাসিয়েছে চোখের জলে।
মনজুর আহমদ বলেন, আজীবন নেতা মেনেছি। তার কথা শোনেছি। কোন চাওয়া-পাওয়া ছিলনা। নেতা আমাদের মনের কথা বুঝতে পারতেন। হৃদয় থেকে ভালোবাসতাম তাকে। আমাদের এমন নেতা আর পাবনা।
চোখের জল মুছতে মুছতে নকুল দাস জানালেন, কিশোর বয়স থেকেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনতেন তিনি। এভাবে মানুষকে কথার যাদুতে ধরে রাখতে পারা মানুষের সংখ্যা বিরল। তিনি জানালেন, দেশ-বিদেশে দিরাই-শাল্লার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন সুরঞ্জিত। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বধান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রায় ৪৫ বছর রাজনীতিতে শীর্ষে অবস্থান করাসহ সংসদীয় গণতন্ত্র, প্রগতির পক্ষে অকুণ্ঠ কথা বলেছেন। আজীবন লড়ে গেছেন মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। এমন নেতাকে হারিয়ে আমার মতো দিরাই-শাল্লার হাজারো মানুষ এখন কাঁদছে।
শুধু দিরাই-শাল্লাই নয় অবরোধের মধ্যেও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন শোকসভায়। জাতীয় নেতাদের মুখ থেকে এবং তার সহধর্মিনী ও প্রিয় সন্তানের মুখ থেকে নেতার কথা শোনার জন্য তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিরাই বিএডিসি মাঠে বসেছিলেন। শোকসভা শেষ করেই তারা মাঠ ত্যাগ করেন।