বিশেষ প্রতিনিধি::
দশদিনের ব্যবধানে আবারও সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ছাতক, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও জেলা সদর সহ প্রতিটি উপজেলায়ই এখন পানি বাড়ছে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। তবে রবিবার সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও হাওরাঞ্চলে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
গত ৯ জুলাই থেকে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জে বন্যার সৃষ্টি হয়। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমাসহ সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও চলতির পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমার পানি রবিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৪২ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৫০ মিলিমিটার।
এদিকে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে জেলা শহরের নবীনগর, কাজির পয়েন্ট, ষোলঘর, উকিলপাড়া, হাজিপাড়া, বড়পাড়া, সাববাড়ি, তেঘরিয়া, মল্লিকপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি দোকানপাট প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নি¤œাঞ্চলের উপজেলা গুলোতেও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। এতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় জেলাবাসীকে। রাস্তাঘাট, মাছ ও ফসলেরও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে প্রথম দফা বন্যায়। এখন দ্বিতীয় দফা বন্যায়ও আরো কয়েকগুণ বেশি ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে সরকারের বিভিন্ন দফতর।
শনিবার বিকেলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করেছে। বন্যার খোঁজ খবর নিতে প্রশাসন প্রতিটি উপজেলায় তথ্য কেন্দ্র খুলেছে। বন্যা কবলিত ৩টি উপজেলা দোয়ারাবাজার, ছাতক ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫৫০টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্ত ১ হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৫২৩ মি.মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢল হয়ে এই পানি নি¤œাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত নদী ও হাওর হয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত করেছে। যার ফলে দ্রুত বাড়ছে পানি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিতীয় বারের মতো রাস্তাঘাট পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় আমনের বীজতলাও তলিয়ে গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকার মৎস্য খামারও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে মাছ। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জের পাদদেশে অবস্থিত চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৫২৩ মি.মিটার বৃষ্টিপাতে ঢলের পানি সুনামগঞ্জে চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। আজ পর্যন্ত পানি বাড়তে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভা করেছি। বন্যার্ত এলাকাগুলোতে কিছু আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক পরিবার উঠেছে। প্রতিটি উপজেলায় তথ্য কেন্দ্র খুলে আমরা নিয়মিত খোজ খবর রাখছি।