আজ ২৭শে জুলাই। বিশ্ব হেড-নেক ক্যান্সার দিবস আজ। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে এবং বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে হেড-নেক ক্যান্সার একটি মারাত্মক মরণব্যাধি রোগ। বাংলাদেশের মোট ক্যান্সার রোগিদের মধ্যে প্রায় ৩০-৩২% রোগি হলো হেড-নেক ক্যান্সারের রোগি!
হেড-নেক ক্যান্সার কি?
হেড-নেক ক্যান্সার হলো শরীরের অঞ্চল ভিত্তিক এক মারাত্মক মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগ। আমাদের শরীরের
মুখ, মুখ গহ্বর ও খাদ্যনালী, কন্ঠ ও শ্বাসনালী, নাক ও নাকের সাইনাস, বড় ও ছোট লালাগ্রন্থি, গলা, থাইরয়েড গ্লান্ড এবং কান ও কানের আশপাশ ইত্যাদি জায়গাগুলোতে যে ক্যান্সার ডেভেোলাপ করে, সমষ্টিগত ভাবে তাদেরকে হেড-নেক ক্যান্সার হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে।
হেড-নেক ক্যান্সার কাদের বেশি হয়?
১) বয়স্ক রোগি যাদের বয়স ৫০ ক্রস করেছে
২) তামাকজাত দ্রব্য যেমন বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, গাঞ্জা ইত্যাদি ব্যবহারকারীদেরর।
৩) পান, সুপারী, চুন, খয়ের, জর্দা, গুল ইত্যাদি ব্যবহারকারীদের।
৪) বিভিন্ন প্রকার এ্যালকোহল(মদ) সেবনকারীদের।
৫) ক্রনিক রেডিয়েশন( তেজস্ক্রিয় রশ্মী) এ নিজেকে এক্সপোজার করা হলে।
৬) অন্যান্য কারণসমূহ।
কি কি উপসর্গ দেখা দেয়?
সাধারনত উপসর্গ কি হবে, তা নির্ভর করে হেড-নেক অঞ্চলের কোন জায়গায় ক্যান্সার ব্যাধি বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। তবে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক উপসর্গ যদি কারো থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতনতার সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। যেমন-
১) নাক, কান ও গলার কোন জায়গা এক বা একাধিক গুটি(ফোলা) দেখা দিলে।
২) খাবার/পানি গিলতে সমস্যা হলে।
৩)কন্ঠস্বর পরিবর্তন হলে এবং স্বাভাবিক চিকিৎসার তিন সপ্তাহের পরেও সুস্থ্য না হলে।
৪) মুখ ও মুখের ভিতর ঘা অথবা ফোলা দেখা দিলে এবং স্বাভাবিক চিকিৎসায় তা সেরে না উঠলে।
৫) নাক বন্ধ হয়ে রক্তমিশ্রিত সর্দি বের হয়ে আসলে অথবা নাক ও নাকের আশপাশেে স্বাভাবিক গঠন পরিবর্তন হয়ে গেলে।
৬)কান ও কানের ভিতর অস্বাভাবিক ফোলা দেখা দিলে এবং সেই সাথে রক্তমিশ্রিত পুজ/পানি কান দিয়ে বের হলে(বিরল ঘটনা)।
৭) শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া সহ অন্যান্য কারণসমূহ।
এসব উপসর্গ দেখা দিলে কি করণীয়?
উপরে উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দিলেই যে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, তা কিন্তু নয়। তবে এইসব উপসর্গ দেখা দিলে অতিদ্রুত আপনার নিকটস্থ রেজিস্টার্ড চিকিৎসক অথবা একজন নাক, কান, গলা ও হেড-নেক সার্জারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে মোটেও কালবিলম্ভ করবেন না। তিনি আপনার উপসর্গের মেরিট বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও পরামর্শ প্রদান করবেন অথবা সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য উন্নত প্রতিষ্ঠান/ব্যাক্তির নিকট রেফার্ড করবেন।
হেড-নেক ক্যান্সারের চিকিৎসা কি?
হেড-নেক অঞ্চলে সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের পর ক্যান্সার রোগটির মেরিটের উপর বিবেচনা করে চিকিৎসা প্রণালী প্রদান করা হয়। ক্যান্সার থেকে আপনাকে সারিয়ে তোলার জন্য আপনার চিকিৎসক/চিকিৎসক টীম সার্জারী, রেডিওথেরাপী, কেমোথেরাপি করার পরামর্শ দিবেন। অনেক সময় সার্জারী করার আগে/পরে বিশেষ করে রেডিওথেরাপী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি দিয়ে আপনার চিকিৎসা সম্পন্ন করার প্রয়োজন হতে পারে।
আশার কথা হলো আমাদের বাংলাদেশেই এই সব ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে ডিজাইন করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তিবর্গ তা সফলতার সাথে সম্পন্ন করে চলেছেন। তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যতদ্রুত আপনার রোগটি শনাক্ত হবে, আপনার চিকিৎসার ফলাফল ততদ্রুত আপনার জীবন রক্ষার পক্ষে আসবে।
হেড-নেক ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়
হেড-নেক অঞ্চলে ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে অাপনারকে অবশ্যই সচেতনতার সাথে জীবন ও অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারন এই ক্যান্সার অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম”।
হেড-নেক ক্যান্সার থেকে বাঁচতে যা যা করা উচিতঃ
১)সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য, যেমন- বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গাঁজা, জর্দা, সাদাপাতা, গুল ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
২) পান-সুপারী, খয়ের, চুন সাথে তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করতে হবে।
৩) এ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
৪) রেডিয়েশন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
৫) সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবন-যাপনের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
৬) যে কোন রোগের অতিদ্রুত যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে তামাকজাত দ্রব্যের সাথে কেউ যদি এ্যালকোহল সেবন করার অভ্যাস করে ফেলে, তাহলে মুখ ও মুখ গহ্বরে ক্যান্সার হওয়ার হার নরমালের চেয়ে ৬গুণ বেড়ে যায়।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। করোনামুক্ত থাকার জন্য নিজের বাসায় থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
ধন্যবাদ।
ডা. এম. নূরুল ইসলাম
নাক, কান, গলারোগ বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন
আবাসিক সার্জন(ইএনটি)
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।