হাওর ডেস্ক::
করোনার এই মহামারিতে আরো দীর্ঘ সময় ধরে মাস্কবদ্ধ জীবনই ভবিতব্য। এটা পড়তেই হবে। এমনকি না পড়লে শাস্তির ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। কিন্তু এই ঘোর বর্ষায় ভাইরাস ঠেকানোর এই মোক্ষম অস্ত্রটি যদি ভিজে বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়, তাহলে? বিশেষজ্ঞদের মতে, তেমনটা হলে বিপদ আরো বাড়বে। ভিজে বা স্যাঁতস্যাঁতে মাস্ক মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাসের সহজ প্রবেশপথ হয়ে উঠতে পারে। আর এই মৌসুমে পথেঘাটে হরহামেশাই এমন সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে হঠাতই ঝমঝমিয়ে একপশলা বৃষ্টি। বৃষ্টিতে থেমে গেলে আবার ভ্যাপসা গরম, ভেজা হাওয়া। মাস্কের ভেতরে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সব মিলিয়ে নিমেষেই মাস্ক স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তেমনটা হলে তিন, চার কিংবা পাঁচ লেয়ারের মাস্কেও রেহাই মিলবে না। কারণ স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা ভাইরাসের বেঁচে থাকার আদর্শ স্থান। মাস্ক যতো দামি হোক না কেন, ভিজলেই তার কার্যকারিতা নষ্টক হবে। তৎক্ষণাৎ তা বদলে ফেলতে হবে। ভিজে মাস্কে শরীরে জীবাণু ঢোকার প্রবল সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাছাড়া মাস্কের ভেজা অংশ ভাইরাস তৈরির জায়গাও হয়ে উঠতে পারে। তাহলে উপায়? এই আবহাওয়ায় একটি অতিরিক্ত মাস্ক সঙ্গে রাখতেই হবে। সেক্ষেত্রে ডিসপোজেবেল মাস্ক থাকলে ভালো।
যদিও ইতিমধ্যেই বাজারে মিলছে ওয়াটারপ্রুফ মাস্ক। কিন্তু সেগুলি ভাইরাস রোধে কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়ার মতো তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। বর্ষা থেকে বাঁচতে ফেস শিল্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ওয়াটারপ্রুফ মাস্ক বা ফেস শিল্ডের দাম সাধারণের সাধ্যের মধ্যে নয়। আর এমনিতেই চিরকাল যে নাক আর মুখ খোলা হাওয়ায় মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিত, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা এত রাখঢাক সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু ভাইরাস থেকে বাঁচতে মুখ আর নাক ঢেকে রাখা ছাড়া উপায় নেই।
তাছাড়া যাদের ত্বকের সমস্যা রয়েছে বর্ষার সময় মাস্ক ব্যবহারে তাদের আরো সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। ডার্মাটোলজিস্টের ভাষায়, যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত এই সময় আর্দ্রতার কারণে তাদের ব্রণর সমস্যা বাড়তে পারে। লোমকূপের গোড়ায় ফলিকুলাইটিস বা ইনফেকশন হতে পারে। স্কিন ইচিং এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে মাস্ক ভিজে গেলেই তা পরিবর্তন করতে হবে। সুতির মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা ব্যবহারের পর তা সাবানে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
তবে বর্ষায় কোনো মাস্ক কার্যকরী হবে, তা যাচাইয়ে সম্প্রতি মুম্বইয়ে একটি ওয়েবিনারে যোগ দিয়েছিলেন ৫০০ বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তিবিদরা। সেখানে এই মরশুমে ব্যবহারের জন্য সুতি কিংবা কাপড়ের মাস্কের তুলনায় সার্জিক্যাল মাস্ককে কার্যত সার্টিফাই করেছেন অনেকে।
টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের বিজ্ঞানী ড. অর্ণব ভট্টাচার্য বলেন, বর্ষায় সুতি ও কাপড়ের মাস্ক সহজেই ভিজে, স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠতে পারে। এসময় তাই সার্জিক্যাল মাস্কই আদর্শ। সার্জিক্যাল মাস্কে হাইড্রোফোবিক লেয়ার থাকে। ফলে পুরোপুরি না ভিজলে তা স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়াও জরুরি পরিষেবা সঙ্গে যুক্তদের মাস্কের পাশাপাশি বাধ্যতামূলকভাবে ফেস শিল্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন