বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের সীমান্ত সড়কটি সাম্প্রতিক বন্যায় বিভিন্œ স্থানে দেবে গেছে। বিশেষ করেন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ৭ কি.মি সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরকেন্দ্রিক পর্যটকরা টেকেরঘাট খনি প্রকল্প থেকে বড়গোপটিলা পর্যন্ত সড়ক ধরেই সৌন্দর্য্য অবরোধ অবলোকন করতে আসেন একমাত্র এই সড়ক ধরেই। সাম্প্রতিক তিন দফা বন্যায় এই সড়কের দুটি পয়েন্টে প্রায় ৪০০ মিটার জায়গা সম্পূর্ণ দেবে গেছে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে। তাছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ বড়গোফ টিলার উপর দিয়ে নির্মিত সড়কটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও গত ২০ বছর ধরে সংস্কারের কোন উদোগ নেওয়া হয়নি।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যাদুকাটা নদীর পশ্চিম পাড় থেকে বড়গোফটিলা নিচ পর্যন্ত দেড় কি.মি. সড়ক রয়েছে। নদী ও পাহাড় ঘেরা এই টিলাটি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ২০০১ সনে তৎকালীন এমপি নজির হোসেন রাস্তাটি নির্মাণ ও সংস্কার করেন। এরপরেই খাড়া ও ঢালু প্রকৃতির সড়ক ধরে হাজার হাজার পর্যটক দেখতে আসছেন যাদুকাটা নদী ও বড়গোফটিলাসহ পুরো টেকেরঘাট এলাকা। প্রায় এক দশক আগে টিলার উপরের রাস্তাটি বিলীন হয়ে গেছে। এরপর আর সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রাস্তাটি ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে টিলার পশ্চিম তীরে কড়ইগড়া কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে টেকেরঘাট পর্যন্ত আরো ৬ কি.মি সড়ক রয়েছে। এই সড়কটি টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রিক পর্যটন অবকাঠামোর কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে তাহিরপুরে কৃষি উপকরণ বিতরণ করতে এসে অগ্রাধিকার হিসেবে উন্নয়নের ঘোষণা দেন। এরপর বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে অন্তভূূক্ত করা হয়। সড়ক সংস্কারসহ নানা প্রকল্প যুক্ত রয়েছে এখানে। কিন্তু এই প্রকল্পটির কাজও চূড়ান্ত হয়নি। এখনো ফাইল চালাচালিতে রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিন দফা বন্যায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের চানপুর-রজনীলাইন এলাকার প্রায় ৪০০ মিটার সড়ক মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির তোড়ে দেবে গেছে। ভাঙ্গন কবলিতে স্থানে সড়ক ছিল মনেই হয়না দেখেই। তাছাড়া স্থানে স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর থানার সীমান্ত এলাকার লাখো মানুষ এই একমাত্র সীমান্ত সড়ক দিয়ে জেলা ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করেন। তাছাড়া পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে এসে টেকেরঘাট খনি প্রকল্পের লেক, লাকমাছড়া, বড়গোফটিলা এবং যাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিনিই আসছেন তারা। কিন্তু সড়কটি স্থানে স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীসহ পর্যটকরাও দুর্ভোগে পড়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তরবড়দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আদিবাসী নেতা শঙ্কর মারাক বলেন, বড়গোফ-টেকেরঘাট সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের সড়ক। এই সড়ক ধরে ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও তাহিরপুর থানার কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক। সম্প্রতি বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া বড়গোফটিলার উপরের সড়কটি গত ২০ বছর ধরে সংস্কার হচ্ছেনা। এতে এলাকাবাসীসহ পর্যটকরাও দুর্ভোগে আছেন।
সুনামগঞ্জ ট্যুারিস্ট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাহেরিন চৌধুরী মিশুক বলেন, আমরা প্রায়ই টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে এসে যাদুকাটা, টেকেরঘাট লেক, বড়গোফটিলা, শিমুল বাগান ঘুরতে আসি। সড়কটি সহজ হওয়ায় এই সড়ক ধরেই আমরা একাধিক পর্যটন স্থাপনা দেখছি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় পর্যটকদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এই ৭ কি.মি. সড়কসহ সীমান্ত সড়কটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের সড়কটি সাম্প্রদিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বড়গোফটিলার উপরের সড়কটিও ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা এই সড়কটি মাহরাম নদীর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে সংস্কারের পরিকল্পনা নিচ্ছি। তাছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তথ্যও উপরে পাঠানো হয়েছে।