অনলাইন ডেক্স::
জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নম্বর ছাড়া যাতে কেউ ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সোমবার বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ফেসবুকের সেফটি ম্যানেজার বিক্রম লেংগেহরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। ফেসুবকের এই প্রতিনিধি পুলিশকে জানিয়েছেন,‘ফেসবুক কোনও চুক্তি করে না। তবে তারা বিষয়টি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান ফেসবুক প্রতিনিধির কাছে প্রস্তাব দেন, ফেসবুকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের প্রপাগান্ডা নিয়ে করণীয় কী হতে পারে এবং এ নিয়ে তাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সহজে খুঁজে বের করা যায়। একই সঙ্গে ফেসবুকের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কোনও চুক্তি করা যায় কিনা।
ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনার পর বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ফেসবুক একটি সোস্যাল মিডিয়া। এর মাধ্যমে জঙ্গিরা প্রপাগান্ডা চালায়। তারা যাতে এটি করতে না পারে, সেজন্য ফেসবুক যেন তাদের সহায়তা করে। পাসপোর্ট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যেন বাধ্যতামূলক করা হয় ফেসবুক আইডি খোলার ক্ষেত্রে। নারী নির্যাতন ও ধর্মীয় বিষয়ে যেকোনও প্রচারণার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা চাইলে যেন তারা সেটা করে।’
মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কোনও সার্ভিস প্রোভাইডার যদি কোনও দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তাহলে সেদেশের আইন তার জন্য প্রযোজ্য। ফেসবুক যদি বাংলাদেশে ব্যবসা করে, তাহলে বাংলাদেশের আইন-কানুন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পুলিশেকে সহযোগিতা করা তাদের আইনি দায়িত্ব। সেই বিষয়টি সামনে নিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ হতে পারে। বিভিন্ন তথ্য শেয়ারিং হতে পারে। যাতে আমরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারি।’
বিটিআরসির সঙ্গে ফেসবুকের যোগাযোগ আছে। তারপরও পুলিশ টু পুলিশ কেন যোগাযোগের প্রয়োজন হবে, জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অফিসিয়াল চ্যানেলে অনেক সময় লাগে। এ কারণে দেখা যাচ্ছে যে, আমরা যে কারণে সহযোগিতা চাচ্ছি, সেই কারণটা তখন আর বিদ্যমান থাকে না। যে তথ্যটি আমার এ মুহূর্তে প্রয়োজন সেটা যদি দুই মাস পরে পাই, তখন আর সেটা কোনও কাজে লাগে না। যেমন একজন আসামি আমার কাছে থাকা অবস্থায় যেভাবে তথ্য পাই এবং সেই তথ্য আমার ভবিষ্যত অপারেশনে সহায়তা করে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এআইজি মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘প্রাইভেসি পলিসি কোনোভাবে ন্যাশনাল পলিসি বা জনমতের বিরুদ্ধে যাতে হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। যেমন ব্যাংকে আপনি অ্যাকাউন্ট করলে সেটার অবশ্যই প্রাইভেসি থাকতে হবে। কিন্তু আপনি যখন সন্দেহজনক লেনদেন করেন তখন অবশ্যই সেটা দেখার অধিকার নিরাপত্তা বাহিনী কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর রয়েছে।’
রবিবার থেকে ‘সহিংস জঙ্গিবাদ ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক সহযোগিতা’ শীর্ষক পুলিশ প্রধানদের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে। সেই সম্মেলনে মনিরুজ্জামান উপস্থাপন করেন- ‘মিলিট্যান্সি প্রোপাগান্ডা বাই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ইটস ইফেক্ট ইন দ্যা সোসাইটি’ নামে একটি নিবন্ধ। এই নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। শতকরা ৮০ ভাগ জঙ্গি বলেছে, তারা সোস্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্ত হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে।
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে যে কেউ যেকোনও কিছু প্রকাশ, মন্তব্য বা যেকোনও ছবি প্রকাশ করতে পারছে। যেহেতু এখানে কোনও সেন্সর নেই, তাই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো এখান থেকে বিশেষ সুবিধাটা নিচ্ছে। তারা একদিকে যেমন সোশ্যাল মিডিয়াকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে, তেমনি নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্য প্রকাশ করতে নানারকম নথি এবং ভিডিও এখানে প্রকাশ করছে।’ ইসলামিক স্টেট বা আইএসের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আইএসের ফরেন ফাইটারদের কমবেশি সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উদ্ভুদ্ধ হয়েই তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।’
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের কারণে সস্তায় ইন্টারনেট ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করে পুলিশ সদর দফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো প্রোপাগান্ডা প্রতিহতের চেষ্টা চলছে। পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা, এনটিএমসি, সিটির সাইবার ক্রাইম শাখা, সিআইডি, র্যাব, এনএসআই ও ডিজিএফআই একযোগে অনলাইনে জঙ্গিবাদের প্রোপাগান্ডা বন্ধের জন্য কাজ করছে।’