সাজ্জাদ হোসেন শাহ্ : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাণ্যিজিক কেন্দ্র বাদাঘাটে শারিরিক প্রতিবন্ধী কিশোর (দেখতে শিশুদের মতো) শরিফকে নিয়ে টিকটকসহ বিভিন্ন ধরণের আপত্তিকর ভিডিও টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে রোববার বিকেলে ৮ যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এঘটনায় রোববার রাতে শরিফের বড়ভাই শামীম বাদী হয়ে আটক ৮জন ও পলাতক দুই জনসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আটকৃতরা হলো, উপজেলার ৫নং বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের শেখ আ. রহমানের ছেলে আলম শেখ (২৩), আনোয়ার হাসেন রুমানের ছেলে তারেক (২২), নাজিম উদ্দিনের ছেলে দীপু (২২), বাচ্চু মিয়ার ছেলে রনি (১৭), বাদাঘাট গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ্ (১৬), ৪নং বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মৃত আ. গফুরের ছেলে মোজাম্মেল হক (২২), হাবিবুর রহমান সংগ্রামের ছেলে সাগর (২১), দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পাগলপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে মনির মিয়া (১৯)। রোববার রাতে আটককৃতদের এবং ভিকটিম শরিফকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে আটককৃতদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ভিকটিম শরিফের বড়ভাই শামীমের দায়ের করা মামলায় আটককৃতদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, জুলাইয়ের শেষের দিকে উপজেলার বাণ্যিজিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের সততা স্টোরের মোজাম্মেল হকের ফেসবুক আইডি থেকে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে কিশোর শরিফের ছবি ও একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। ওই ভিডিওতে শরিফ জানায় বাদাঘাটের কয়েক যুবক তাকে জোর পূর্বক মদ খাইয়ে বিভিন্ন রকমের টিকটক ভিডিও তৈরি করে তা ইউটিউভসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে।
বিষয়টি সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএমের নজরে আসলে উনার দিকনির্দেশনায় তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান ও বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মাহমুদুল হাসান বিষয়টি গোপনে তদন্ত শুরু করেন। শারিরিক প্রতিবন্ধী কিশোর শরিফকে দিয়ে দিয়ে এমন আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করায় জেলাসদরসহ গোটা উপজেলায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
রোববার দুপুরে শরিফের স্বীকারোক্তী অনুযায়ী ভিডিও ভাইরালের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে উপজেলার ৫নং বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের শেখ আ. রহমানের ছেলে আলম শেখ (২৩), আনোয়ার হাসেন রুমানের ছেলে তারেক (২২), নাজিম উদ্দিনের ছেলে দীপু (২২), বাচ্চু মিয়ার ছেলে রনি (১৭), বাদাঘাট গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ্ (১৬), ৪নং বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মৃত আ. গফুরের ছেলে মোজাম্মেল হক (২২), চরগাও গ্রামের হাবিবুর রহমান সংগ্রামের ছেলে সাগর (২১) ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পাগলপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে মনির মিয়া (১৯)কে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
শরিফ মিয়া (১৩) উপজেলার ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের ঢালারপাড় (লাউড়েরগড়) গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। ৯ ভাই বোনের মধ্যে শরিফ ৭নং। শরিফের মা জানিয়েছেন, জন্মের সময়ই শরিফ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা ছোট ছিল। স্থানীয় ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে অনেক টাকা পয়সা খরচ করেও শরিফকে স্বাভাবিক করা যায়নী। ছোটবেলা থেকেই সে বাড়ির বাইরে থাকে অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাড়ি নেয়া যায়না। এঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে শরিফের বড় ভাই শামীম বাদী হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও আইসিটি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, ভিকটিমের বড় ভাই শামীম বাদী হয়ে আটককৃত ৮জনসহ আরো দুইজনকে পলাতক আসামী করে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে।